পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েকমাসে গমের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার কোন প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বরং গত কয়েকমাসে বাংলাদেশের বাজারে আটা ও রুটির দাম বেড়েই চলেছে।
জুন মাসেও ঢাকার বাজারে এক কেজি আটা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৬০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর এর গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে গমের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
কৃষ্ণসাগর থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার কোন প্রভাব পড়ছে না কেন?
আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও প্রভাব নেই দেশের বাজারে
বাংলাদেশের একজন গম আমদানিকারক কেএইচ এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার খোরশেদ আলম দাবি করছেন, ‘’আমরা আগে যে দামে গম কিনেছি, এখন সেগুলো আসছে। নতুন দামের গমের এলসি আমি এখনো খুলি নাই, অনেকেই খোলে নাই। সেগুলো বাজারে এলে তখন হয়তো আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারবো।‘’
বাংলাদেশে প্রতি বছর গমের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা আমদানি করতে হয়।
আমদানির বেশিরভাগটা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে করা হতো। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বাড়তে শুরু করে।
ফলে বাংলাদেশের আমদানিকারকরাও বেশি দাম দিয়ে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া থেকে গম আমদানির চেষ্টা করেন।
তবে ডলারের বিপরীতে টাকার দর পড়ে যাওয়ার কারণে সেটিও গমের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি উপাদান যোগ করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গমজাত খাদ্যপণ্য ও বেকারি আইটেমের দাম রাতারাতি বেড়ে যায়। খোলা আটার কেজিও ৩০ টাকা থেকে এখন ৬০ টাকায় উঠেছে।
মি. আলম বলছেন, ‘’ডলারের দামও তো এখন আগের অবস্থায় নেই। আগে আমরা ৮৫ টাকা দরে ডলার কিনতাম, এখন সেটা ১০৫ টাকা হয়েছে। ফলে চাইলেও আগের দামে আর হয়তো ফিরে যাওয়া যাবে না। কিন্তু নতুন করে যেসব গমের এলসি হবে, সেগুলো দেশে আসতে শুরু করলে দেশের বাজারেও দাম কিছুটা অবশ্যই কমবে।‘’
গমের দামের বৃদ্ধি ও হ্রাস
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে গম ও ভোজ্য তেলের মতো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে।
কারণ বাংলাদেশের গমের চাহিদার বড় অংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
তবে অক্টোবরের প্রথম দিকে কৃষ্ণসাগর থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানির চুক্তি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছিল।
পরবর্তীতে ওই চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে আসার ঘোষণা দেয়ার পর গমের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছিল। তবে কিছুদিন পরেই রাশিয়া কৃষ্ণসাগর থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর আবার দাম কিছুটা কমে আসে।
সেই সঙ্গে রাশিয়ায় গমের বাম্পার ফলন হওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে।
শুক্রবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে প্রতি টন গম লেনদেন হয়েছে ২৭৯.৬২ ডলার দরে। অক্টোবর মাসেও এই দর ছিল ৩৯৫ ডলার।
ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের গম বিশ্ববাজারে আসার পর গমের দাম আরও কমতে পারে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা