বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি
সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা কাম্য
করোনায় বলা চলে দেশের অবস্থা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো। তবু দেশে খোলা হচ্ছে না স্কুল-মাদরাসা ও বিশ্ব বিদ্যালয়। শুরু হয়েছে আন্দোলনও। এতে ভিন্নমাত্রাও দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার হাল খারাপের দিকে গড়ানোটা স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার চিন্তা করে শিগগিরই খুলে দেয়া উচিত বিশ^বিদ্যালয়সহ সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারির কারণে প্রায় ১১ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেশনজট ও অন্যান্য অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে ক্লাস চালানোর পাশাপাশি অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাও নিতে শুরু করে।
আবাসিক হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছাকাছি মেস ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। এতে বাড়তি ব্যয়ের পাশাপাশি তারা নানা রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে থাকে। এই অবস্থায় আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে উঠে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৪ মে পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। এ সময় সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন বা সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কারো কারো মতে, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আরো তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সমর্থন করা গেলেও সব পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে অনেকেই কর্মজীবনে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছিল। একটি বছর তাদের জন্য অনেক মূল্যবান। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও ছিল। এসব বিবেচনা করে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) তাতে সায় দিয়েছিল। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, অনার্স চতুর্থ বর্ষ, বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ইত্যাদি পরীক্ষা চলছিল। সমস্যা দেখা দেয় আবাসিক হল বন্ধ থাকায়।
শিক্ষার্থীরা আশপাশের মেসে এখন গাদাগাদি করে থাকছে। তাদের অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা অনেকের জন্যই খুব কষ্টকর। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িত। এ অবস্থায় তিন মাসের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ায় তা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, গার্মেন্ট কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। সব কলকারখানা, অফিস-আদালত চলছে; এমনকি বিনোদনকেন্দ্র, সিনেমা হলও বন্ধ নয়। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? তারা চায়, এই সময়ে করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অন্তত হলগুলো খুলে দেওয়া হোক এবং জরুরি পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। শিক্ষকদের কেউ কেউ সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ মনে করছেন।
আমরা আশা করি, সরকার শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে। ঘোষিত ছুটির মেয়াদ কিছুটা কমানো, সীমিত পরিসরে হল খুলে দেওয়া এবং জরুরি কিছু পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে।