বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে

বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে

বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে

সিদ্দিকুর রহমান : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়েছিল। বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশেকে তখন চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে। বঙ্গবন্ধুকে তার স্বদেশের কতিপয় ‘কুলাঙ্গার’ সপরিবারে হত্যা করতে পারে তা বিশ্ববাসীর কাছে ছিল অচিন্তনীয়। বিশ্ববাসী বেদনাহত হলো এই ভেবে যে, একটি রাষ্ট্রের যিনি গোড়াপত্তন করলেন, নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলেন, সেই রাষ্ট্রেরই কতিপয় বিশ্বাসঘাতক সেই মহানায়ককে নৃশংসভাবে হত্যা করলো। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক ঘটনা।

তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ থেকে লাইনচ্যুত হয়। যাত্রা শুরু হয় পাকিস্তানি ভাবধারা অনুসরণ করে। বাঙালি জাতি সপারিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-কে মেনে নেয়নি। শাসকগোষ্ঠি ইমনেডিটি অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখলেও জাতি এই বিশ্বাসে বুক বেঁধে ছিল যে, একদিন সত্য ও ন্যায়ের জয় হবে আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হবে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের সরকার প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে কঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। যা জাতির ব্যাপক সমর্থন পায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রমে গতি পায়। বিচারকাজ শেষে খুনিদের মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হয়। বস্তুত: সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি বলেছিলেন, ‘আর যদি একটি গুলি চলে, …. তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে তার প্রতিরোধ করবে। আমরা তোমাদের ভাতে মারবো, পানিতে মারবো, তবু বাংলাদেশ স্বাধীন করেই ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ এই ভাষণের মাত্র আড়াই সপ্তাহ পরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেন। পাকিস্তানিরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এক বছর আটকে রাখে বটে কিন্তু তার অঙ্গ স্পর্শ করতে সাহস পায়নি বা সাহস করেনি। আর তিনি তার স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার চার বছরের মধ্যেই তাকে সপরিবারে হত্যাকা-ের শিকার হতে হলো। এই অমার্জনীয় জঘণ্য অপরাধ যারা করেছে তারা চিহ্নিত হয়েছে এবং বেশিরভাগ দ-পাপ্তদের দ- কার্যকর হয়েছে। জাতি ১৫ আগস্টকে শুধু যে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করবে তাই নয়, একই সঙ্গে রাষ্ট্রের সমস্ত বিশ্বাস ঘাতকদের সমূলে উৎপাটন করার সংকল্পও গ্রহণ করবে।

আজও বিশ্ববাসী বলে, বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর মতো হিমালয়তুল্য উচ্চতার নেতা পেয়ে গর্ব করতে পারে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন শুরুর সময় থেকে পাকিস্তানের লৌহমানব প্রেসিডেন্ট আইউব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি বাঙালির স্বাধীকার সংগ্রামকে উচ্চ মার্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে হিমালয়তুল্য উচ্চতায় উঠে যান। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে তিনি সংবিধানিকভাবেও পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বাঙালির অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন। রঙ্গবন্ধু তার জীবনটাকে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সাথে মিশিয়ে ফেলেছিলেন, আলাদা সত্তা আর রাখেননি। তাই কৃতজ্ঞ জাতি শোকাবহ আগস্টে অশ্রু সজল চোখে ও বেদনাহত হৃদয়ে নিবেদন করছে তার ও তার পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *