২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৫ই রমজান, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, আওলাদে রাসূল, ফিদায়ে মিল্লাত মাওলানা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) এর খলীফা, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের পবিত্র বুখারী শরীফের শেষ দরস প্রদানের মাধ্যমে রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসার ফারিগ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান, বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ মাগরিব শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা প্রাঙ্গনে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এই দুআ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ বলেন, বুখারী শরীফ খতমের মজলিস আল্লাহ তাআলার কাছে বড় প্রিয় মজলিস। যে মজলিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস পাঠ করা হয়, সে মজলিসের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারকের সরাসরি সম্পর্ক হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা সেই মজলিসকে একদল ফেরেশতাদের দ্বারা ঘেরাও করে রাখেন। সেই মজলিসে উপস্থিত সবাইকে আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন।
ইমাম বুখারী রহ. এর বুখারী শরীফ সংকলণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, ইমাম বুখারীর সময়কালে ইসলামের দুশমনরা ইসলামকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এক দূরভিসন্ধি করলো। তারা জাল হাদীস বানানো শুরু করলো। একদিন ইমাম বুখারী রহ. স্বপ্ন দেখলেন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দেহ মোবারক থেকে মাছি তাড়াচ্ছেন। তখন তিনি ঐ যামানার একজন বিশিষ্ট আলেমের কাছে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলে আলেম তাকে জানালেন, এ স্বপ্নের অর্থ হলো তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসকে ‘জাল হাদীস’ মুক্ত করবেন। সেই থেকে তিনি হাদীস সংকলণ শুরু করেন।
‘বুখারী শরীফ আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য এক কিতাব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইমাম বুখারীর সহীহ নিয়্যতের কারণে আল্লাহ তাআলা বুখারী শরীফকে কবুল করছেন। সারা দুনিয়ায় এই কিতাবকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ওলামায়ে কেরাম বলেন, কেউ যদি কসম খেয়ে বলে বুখারী শরীফে কোনো জাল হাদীস নেই, তাহলে তার কসম মিথ্যা হবে না। বুখারী শরীফ আল্লাহ তাআলার কাছে বড় প্রিয় কিতাব। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই কিতাব খতম করে যেকোনো নেক দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই কবুল করেন।
বুখারী শরীফের শেষ হাদীসে ‘আমলনামা পাল্লায় ওজন করা’ প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ বলেন, বিজ্ঞান সঠিক পথে চললে ইসলামের সাথে মিলে যায়। বিজ্ঞানীরা এক সময় বলতো, যেসব জিনিসের আকৃতি নেই, দৈর্ঘ্যপ্রস্থ নেই, সেসব জিনিসের ওজন করা যায় না, মাপা যায় না, তাই আমলনামাও মাপা যাবে না। কিন্তু ইমাম বুখারী প্রমাণ করেছেন যে, অস্তিত্বহীন জিনিষকেও পরিমাপ করা যায়। ইমাম বুখারী যেটা তার যামানায় প্রমাণ করেছেন, বিজ্ঞানীরা কিছুকাল আগে সেটা প্রমাণ করেছে। তারা প্রমাণ করেছে বাতাসও পরিমাপ করা যায়। এমনকি মানুষের মনের অনূভুতিও আজকাল পরিমাপ করা যায়।
আগেরকালের মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজকে অস্বীকার করতো। কারণ তারা বিষয়টাকে সম্ভব মনে করতো না। কিন্তু বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা এখন খুব সহজেই বুঝতে পারি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ সত্য ছিলো। মিরাজ কোনো বানোয়াট বিষয় ছিলো না। সুতরাং বলা যায়, বিজ্ঞান সঠিক পথে চললে ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোনো সংঘাত হবে না। বরং ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের মিলন ঘটবে। আর যখনই বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ হয়, বুঝতে হবে বিজ্ঞান সঠিক পথে চলেনি।
মসজিদ-ই-নূর শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লী মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অত্র মাদ্রাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস আল্লামা মাহফুজুল হক কাসেমী, মাওলানা মুফতি খোরশেদ আলম কাসেমী, মাওলানা মুসলিম, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা এনায়েত কবীর, মাওলানা ইউসুফ সাহেব, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা শরীফুল ইসলাম, মাওলানা হাবীবুল্লাহ, কারী নজরুল ইসলাম, মাওলানা আসআদ আল হুসাইনী, মাওলানা যয়নুল আবেদীন, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: খতমে বুখারীকে বিদআত বলার সুযোগ নেই