বৃষ্টিতে আগুন নিত্যপণ্যের বাজারে

বৃষ্টিতে আগুন নিত্যপণ্যের বাজারে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর, জিনজিরা এবং রাজধানীর হাতিরপুল ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টিতে রাজধানীর বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য আসতে পারেনি। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে বৃষ্টির প্রভাব কেটে গেলে দাম আবার কমবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৫০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।

এ ছাড়া শিম ৪০ টাকা, আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, নতুন আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও শালগম বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০ টাকা। আর প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি ডজন গোল লেবু ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, পালংশাক ১৫ টাকা ও লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে পর্যাপ্ত সবজি আসতে পারেনি। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা ইসমাইল জানান,
বৃষ্টিতে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে বৃষ্টি কমলে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমে যাবে।

আর ক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠছে। বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে বেশি দাম হাকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।

পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা; আর পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টিতে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। বৃষ্টি কমলে আবারও দাম কমবে।

বৃষ্টির অজুহাত যেন সবখানে। সবজির বাজারের মতো মাছের বাজারের বিক্রেতারাও জানান, বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত মাছ আসতে পারেনি রাজধানীতে। তাই দাম বাড়তি।

কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারে মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ বলেন, বৃষ্টিতে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারেনি। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা মাছগুলোও পৌঁছাতে পারেনি বাজারে। এতে দামে প্রভাব পড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বেড়েছে ইলিশসহ বেশিরভাগ মাছের। প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বাইম ১ হাজার টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

এ ছাড়া প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫২০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৬৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর কেজিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

নাবিল নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রতিটি মাছের দাম বাড়তি। মূলত বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে।

সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১৫ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এজন্য পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় দাম বেড়েছে।

এদিকে বাজারে বেড়েছে মুরগির দামও। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের করিম মোল্লা জানান, বৃষ্টিতে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়েও। তবে গরুর মাংসের দাম কমায় বাজারে মুরগির চাহিদা কম।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে রাজধানীতে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। সে অনুযায়ী রাজধানীর বাজারগুলোতে শুক্রবার নির্ধারিত দামেই গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে।

তবে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

বাজারে বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাসের ডিম ২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ছোলার দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। আর মোটা, মাঝারি ও সরু মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম পড়ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত ময়দার কেজি এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

তবে স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। বাজারে প্রতি কেজি আঠাইশ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা ও মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও বাজারে বেড়ে গেছে চিনির দাম। প্রতি কেজি খোলা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর বাজার থেকে উধাও প্যাকেটজাত চিনি।

বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না। শুল্ক কমিয়ে লাভ নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে না।

নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *