বৃষ্টিতে বাড়ল হাওরের পানি

বৃষ্টিতে বাড়ল হাওরের পানি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আবার পাহাড়ি ঢলের আতঙ্কের মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিতে বাড়ল হাওরের পানি। আর তাতে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে ও ভেঙে ভেতরের অংশে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে তলিয়ে গেছে ১০০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিয়া হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো প্রকল্প নেই। হাওরটিতে ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়ন ও তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের কৃষকরা ধানের আবাদ করেছেন।

ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী তালুকদার বলেন, রাঙামাটিয়া হাওর তলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর ইউনিয়নে সব কয়টি হাওর ডুবে গেল। তিনি জানান, রাঙামাটিয়া হাওরে ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। তবে তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ শনি ও মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ এখন পর্যন্ত অক্ষত আছে।

এদিকে আবারও পাহাড়ি ঢল আতঙ্কে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা ক্ষেতের আধাপাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু গতকাল বৃষ্টির কারণে কাটা ধান শুকাতে পারেননি। বৃষ্টি আরো কয়েক দিন চলতে থাকলে তাতে নতুন সংকট দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে জমির আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমা এলাকার কৃষক রিপচান হাবীব বলেন, ‘পানিতে তলিয়ে গেছে হাওর। যে ধান কেটেছি এখন তাই শুকাতে পারছি না। একদিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, অন্যদিকে ধান শুকানোর জায়গার অভাবে ভুগছি।’

সুনামগঞ্জের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ৮২ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে, যার গড় হিসাব ৪৯ শতাংশ। তবে কৃষক ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ধান কাটার পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি হবে না।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় ১৭টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, হাওরে এ বছর দুই লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর। এখনো এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি আছে। তবে এই মাসের মধ্যেই হাওরের ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান, জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হয় ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট ৩০ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওরের ৭৫ শতাংশ ও সমতলে ৪ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

নেত্রকোনা পাউবো ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় ধনু নদের পানি বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ অবস্থায় হাওরের কীর্তনখলা বাঁধ ও পায়ার বাঁধ মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। এখন সব বাঁধের গোড়ায় পানি। এ অবস্থায় এলাকার কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম মোবারক আলী জানান, মঙ্গলবার রাতে তিন সেন্টিমিটার পানি বাড়লেও গতকাল দিনের বেলায় পানি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু টানা তিন দিন ধরেই ধনু নদের পানি বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কয়েকটি বাঁধ নিয়ে ভয় আছে।

কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরে ৭০৫ হেক্টর ও নেত্রকোনায় ১১৩ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।

গত ২ এপ্রিল সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে হাওরডুবি শুরু হয়। পরে ৫ এপ্রিল ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলহানির ঘটনা ঘটে। গত ৭ এপ্রিল দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের বৈশাখী বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর গত ১৭ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন আফরমারা বাঁধ উপচে হাওরের ফসল ডুবে যায়। এই দিন একই হাওরের বাগমারা সংলগ্ন একটি বাঁধ ভেঙে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *