- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
ওলামায়ে দেওবন্দের কোনো তুলনা নেই। অতুলনীয়। আসলে তারাই উম্মাহর সঠিক রাহবারী করছেন। পৃথিবীজুড়ে আছে ওলামায়ে দেওবন্দের খেদমত। সূর্য উদয়ের দেশ থেকে সূর্যাস্তের দেশ তথা মাশরেক থেকে মাগরেব সবখানে আছে ওলামায়ে দেওবন্দের আওলাদ-ফরজন্দ। সফর দর সফর ‘দেশে দেশে’ যেখানেই সফর করবেন, সেখানেই দেখবেন দেওবন্দের সন্তানেরা মানুষের খেদমতে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর যেখানেই মানুষের বসবাস, সেখানে দেওবন্দী আলেম-ওলামা মানুষের সাথে মিশে আছে। পথভোলা মানুষকে দিচ্ছে সঠিক পথের সন্ধান। পতনম্মোখ জাতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শক্তি সাহস জোগাচ্ছে।
ওলামায়ে দেওবন্দের বড় বৈশিষ্ট হলো তাদের মাঝে বাড়াবাড়ি নেই আবার ছাড়াছাড়ি নেই। আজকাল কিছু কিছু মানুষ বাড়াবাড়িতে আছে। যেমন শরীয়াতের বিষয়গুলোতে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।যেখানে যতটুকু সেটা না করে তার মধ্যে অতিরিক্ত কিছু প্রবেশ করানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে আবার কিছু আছে ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে। তারা ইসলামী নিয়ম- নীতি কাঁট- ছাট করে পালন করছে। কখনো অনেক আমল ছেড়ে দিচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ, ওলামায়ে দেওবন্দের কোনো বাড়াবাড়ি নেই। শরীয়াতের কোনো বিষয়ের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করে না। আবার কোনো আমল কাঁটছাঁট করে ছেড়ে দেয় না। আর একারণেই আজ বিশ্বব্যাপি ওলামায়ে দেওবন্দের তাহরিককে কবুল করেছে। সমাদৃত হয়েছে বিশ্বব্যাপি।
দেশে-বিদেশে নানা ফিতনার সুত্রপাত ঘটেছে। বিভিন্ন ধরনের ফিতনার আভির্ভাব হয়েছে। যেমন কিছু ফিতনা আছে, যাদের মতাদর্শ অত্যন্ত ভয়াবহ। যেগুলো দ্বারা মানুষের ঈমান শেষ হয়ে কাফেরের কাতারে চলে যায়। আবার কিছু ফেরকা আছে যেগুলো দ্বারা মানুষ চরম গোমরাহীতে ডুবে যায়। সে মতাদর্শ থেকে ফিরে আসাও কঠিন হয়ে পড়ে। এসব ফিতনা দেশে-বিদেশে সবখানে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষকে গোমরাহীর দিকে ধাবিত করছে।
ওলামায়ে দেওবন্দ আরেক বৈশিষ্ট হলো, সকল ফিতনার ব্যাপারে সজাগ। কোনো ফিতনা প্রশ্রয় দেয় না। আপোসহীন। এমনকি নিজ ঘরানার মধ্যেও যদি বাতিলপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলায়, তাহলে তাকেও প্রত্যাখ্যান করে থাকে। একটু চোখ- কান খুলে দেখলে বোঝা যায় বর্তমান দেশ ও জাতি ক্রান্তিকালে পৌছে গেছে। বাতিলের সয়লাব চরম পর্যায়ে, তেমনি কঠিন মুহুর্তে দেওবন্দী আলেমগণ হক-হক্কানিয়্যাতের উপর অটল-অবিচল। আজকাল মিডিয়াগুলো বাতিলের কব্জায়। সর্বক্ষেত্রে বাতিলের প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছে। কখনো হকপন্থীগণ নানান হুম- ধমকির শিকার হচ্ছে। তারপরেও কিন্তু ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হকের উপর অনড়।
মিলাদুন্নবীর কথাই চিন্তা করুন। কীভাবে বাতিলপন্থীগণের দৌরাত্মা। দেশজুড়ে কীভাবে দাপট দেখাচ্ছে। আর মিডিয়াগুলোও তাদের প্রচুর কভারেজ দিতে ভুল করছে না। লাখো জনতাকে বেদাত তথা শরীয়াতের মধ্যে নতুনত্ব ঘটিয়ে সেটাকে নিয়ে কীভাবে বাড়াবাড়ি। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্রগ্রাম এবং বড় বড় শহরে বাতিলপন্থীদের কত্ত মনগড়া কাজে শামিল হতে দেখলাম। কিন্তু দেওবন্দী আলেমগণ ঠিকই তাঁদের হক দৃষ্টিভঙ্গির উপরে সর্বদা কায়েম।
এমনিভাবে আরো নানান ফেরকার দৌরাত্মা চোখে পড়ে। তাদেরও মিডিয়া কভারেজ দেয়। তারাও শরীয়ত বিরোধী বিভিন্ন জিনিসের উদ্ভাবন ঘটায়। মানুষকে ভিন্ন রাস্তায় নেওয়ার কোশেশ করে, কিন্তু দেওবন্দী আলেমগণ কখনো স্রোতে গা ভাসায় না। স্রোত দেখলেই সেদিকে দৌড় দেয় না। বরং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে হক-হক্কানিয়্যাতর উপর অটল-অবিচল। এজন্য ওলামায়ে দেওবন্দ সবসময় বেমেছাল। দুনিয়ার কোনো জায়গার সাথে এঁদের তুলনা নেই।
দেওবন্দী কী? ওলামায়ে দেওবন্দ কী? দেওবন্দী চিন্তাধারা কী? এ সম্পর্কে দারুলউলুম দেওবন্দের সুদীর্ঘকালের মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তৈয়্যব রহ. ‘ওলামায়ে দেওবন্দ কা দীনি রুখ আওর মাসলাকী মেজাজ’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘দারুল উলুম দীন হিসেবে ইসলামের অনুসারী, মাসলাকগত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী, মাযহাবগত দিক থেকে হানাফি মাযহাবের অনুসারী, আধ্যাত্মধারায় সূফীবাদের অনুসারী, আক্বীদাগত দিক থেকে আবুল হাসান আশআরী ও ইমাম মাতুরিদীর অনুসারী, আধ্যাত্মিক মত-পথের প্রশ্নে চিশতিয়া ধারার বরং বলতে গেলে সকল ধারার সমন্বিত রূপের অনুসারী, চিন্তাধারার দিক থেকে শাহ ওলী উল্লাহ’র চিন্তাধারার অনুসারী, চিন্তা-চেতনা ও আদর্শিক মূলনীতিগত দিক থেকে কাসেম নানুতুবী এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি ও মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর অনুসারী।’
সুতরাং এই দৃষ্টিভঙ্গি লালনকারী জামাতের কী কোনো তুলনা হয়? তাদের মাসলাক-মাশরাব সত্যি বেমেছাল। এজন্য ওলামায়ে দেওবন্দের নতুন প্রজন্মকে হুশিয়ার হওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেওবন্দী মেজায ভুলে যান। কখনো বাতিলের চুটকি কথায় গলে পড়ে পড়ে। নিজের আকাবির -আছলাফের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলুন্ঠিত করে ভিন্ন ধারায় গা ভাসিয়ে দেন। সাবধান থাকতে হবে। আমি দেওবন্দী। শত-ঝড়ঝঞ্জার পরেও দিকবিদিক হবো না। হকের উপর অটল অবিচল থাকবো ইনশাআল্লাহ।
- লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট