বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান শেখ হাসিনার

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান শেখ হাসিনার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করা ও সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ বিষয়ে চারটি সুপারিশ করেন তিনি।

শীর্ষ সম্মেলনে “ওয়ান আর্থ” অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখানে জি-২০ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রগতি ময়দানের ভারত মান্দাপান কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন।

শেখ হাসিনা দ্বিতীয়ত বলেন, “মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ও সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

“বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত,” যোগ করেন তিনি

তৃতীয়ত ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ত্রয়ীকার সদস্য হিসেবে তিনি বলেন, “জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আসন্ন কপ-২৮ এ আমি সবাইকে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্ষতি ও ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।”

প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন, “সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত।”

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে ও শক্তিশালীকরণে জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আমাদের একে অপরের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আমাদের মাতৃ পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের অন্যতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ‘আমাদের মাতৃ পৃথিবী’ জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “এ চ্যালেঞ্জগুলো মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাস্তবতা হল মানুষ ও আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।”

“বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

“বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ কম। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন ও এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় অনেক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৯৭ সালে তিনি গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ বা আশ্রয় নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন।”

তিনি উল্লেখ করেন, “এ উদ্যোগের অধীনে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত তার সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনা মূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করা।”

বাংলাদেশ “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অবস্থা অর্জন করেছে।”

“দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য তার সরকার ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে জলবায়ু সমৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছি”।”

শেখ হাসিনা জানান, “তার সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছে।”

“২০৫০ সাল নাগাদ ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এ বছর থেকেই চালু করেছে আমাদের সরকার। এই বিষয়ে আমরা উন্নত দেশের কাছ থেকে সমর্থনের আহ্বান জানাই,” যোগ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *