ভরা মৌসুমেও সবজির চড়া দাম

ভরা মৌসুমেও সবজির চড়া দাম

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সবজির বাজারে গিয়ে কিছুটা বিরক্তই হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া। এখন শীতের মৌসুমে সবজিতে সয়লাব চট্টগ্রাম নগরের বাজারগুলো। কিন্তু দাম কমছেই না। মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এমন ভরা মৌসুমে সবজির দাম আরও কম হওয়া উচিত ছিল। যেমন মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। এটি হওয়ার কথা ছিল ৫০-৬০ টাকা।

মনজুরুল কিবরীয়ার সঙ্গে দেখা হলো আজ শুক্রবার দুপুরে। নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে তিনি গিয়েছিলেন সবজি ও মাছ কিনতে। তাঁর বাসা বহদ্দারহাট এলাকাতেই। সবজি কেনার এক ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। দরদাম নিয়ে জানতে চাইলেই তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বললেন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শসা—আরও নানা সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি। অথচ সরবরাহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না।

সবজি বিক্রেতারা অবশ্য বাড়তি দামের দায় হরতাল-অবরোধের ওপর চাপালেন। বিক্রেতারা বলছেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে দূরদূরান্ত থেকে সবজিবাহী ট্রাক চট্টগ্রাম নগরে ঢুকতে পারেনি। এতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। আর বাড়তে থাকে দাম। তবে দুই দিনের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

আজ বহদ্দারহাট, আতুরারডিপো, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার এলাকায় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ৫০, তিতা করলা ৭০, টমেটো ১২০-১৫০, কুমড়া ৪০-৫০, বেগুন ৪০, শসা ৩৫-৪০, কাঁচামরিচ ১২০, ধনেপাতা ১০০, গাজর ১০০ টাকায়।

বাড়তি দামের বিষয়ে বহদ্দারহাটের সবজি বিক্রেতা মো. সালাউদ্দিন বললেন, এক মাসের ব্যবধানে দাম কমেছে। তবে মাঝখানে বিএনপির অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে একটু সমস্যা হলো। সবকিছু স্বাভাবিক হলে দাম আরও পড়ে যাবে।

মাছের দামও বাড়তি

আট দিন আগে বহদ্দারহাট থেকে দুই কেজি পাঙাশ কিনেছিলেন স্বর্ণকার দিলীপ দাশ। দাম পড়েছিল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। আজ আবার তিনি এসেছিলেন মাছের বাজারে। সেখানেই দেখা হলো পঞ্চাশোর্ধ্ব দিলীপ দাশের সঙ্গে। আজ তিনি এক কেজি রুই কিনেছেন ২৫০ টাকায়, পাঙাশ কেনেন ১৮০ টাকায়। পরে বলেন, ‘এত দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। সে কারণে দাম বাড়তি—এমনটাই দাবি করেছিলেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এখন তাঁরাও দাম বাড়ার জন্য হরতাল-অবরোধের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। দাম কমার কোনো আশা দেখছি না।’

বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কই বিক্রি হচ্ছে মানভেদে প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০, রুই ২০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২৪০, ছোট আকারের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, লইট্টা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

তেলাপিয়া, লইট্টা, পাঙাশ—এ তিন মাছের চাহিদা বেশি। সপ্তাহের ব্যবধানে এই তিন মাছের দাম বাজারভেদে অন্তত ৫০ টাকা করে বেড়েছে।

চালের বাজারে সুখবর নেই

নগরের পাহাড়তলী বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাল আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নওগাঁ, মহাদেবপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নীলফামারী, দিনাজপুর। এই বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট সেদ্ধ ৫২, জিরাশাইল ৬৫, স্বর্ণা ৫২, মিনিকেট আতপ ৫৮, গুটি সেদ্ধ ৪৮, নাজিরশাইল ৭০। বহদ্দারহাট বাজারে সব ধরনের চালের দাম আজ আরও দুই থেকে তিন টাকা বাড়তি ছিল।

খাজা রোডের বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম এই বাজারের একটি দোকানে চালের দরদাম করছিলেন। পরে ৭০ টাকা দরে পাঁচ কেজি জিরাশাইল কিনে নেন। এরপর এগোচ্ছিলেন সবজির বাজারের দিকে। সেখানেই সুরাইয়ার বেগমের সঙ্গে আলাপ। এই গৃহিণী জানালেন, তাঁর স্বামী রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন রিকশা নিয়ে বের হন না। তাঁদের এক ছেলে। নাম মো. রায়হান, মাদ্রাসায় পড়ে। ফলে অনেক টানাটানি করে চলতে হয়। বাজারে বাড়তি দাম দিতে হলে অনেক টান পড়ে যায়। কিন্তু চালের দামটাও তাঁর বাড়তি দিতে হয়েছে।

দাম বাড়ার বিষয়ে পাহাড়তলী বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, হরতাল ও অবরোধের জন্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতি বস্তায় সপ্তাহের ব্যবধানে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *