ভর্তুকি কমিয়ে স্বস্তিতে সরকার

ভর্তুকি কমিয়ে স্বস্তিতে সরকার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ● সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। যদিও এক সময় বাজেটে বরাদ্দের বড় একটি অংশই ভর্তুকিতে ব্যয় হতো। আর তা ছিল সরকারের দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ ভর্তুকি ব্যয় বেশি হলে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ে। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য নিম্নমুখী ও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় ভর্তুকি খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র মতে, গত পাঁচ বছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমেছে শতকরা ৩৫ ভাগ। তবে বরাদ্দ কমলেও সময়ের প্রয়োজনে কিছু খাতে চাহিদা বেড়েছে। যেমন উৎপাদন বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ খাতে এখন বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি লাগছে। আর বিদ্যুৎই একমাত্র খাত, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। অন্য ক্ষেত্রে বরাদ্দের নির্দিষ্ট সীমা দেয়া আছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে মোট ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ওই বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থবছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেয়া বরাদ্দ থেকে নিট খরচ হতে পারে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর পুরো অর্থই খরচ হয়েছে। ওই ব্যয় সেই অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ৬ থেকে ৭টি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। তার মধ্যে বিদ্যুৎ, কৃষি, রফতানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে আরো কিছু খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। তবে ওসব খাতে বরাদ্দ খুব কম থাকে। আগে জ্বালানি তেলে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি লাগতো। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকে জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। আর চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও ওই খাতে শূন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিতে মূলত সার আমদানিতে ভর্তুকি দেয়া হয়। আগামী বাজেটে ওই খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। অবশ্য বিদ্যুতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। মূলত দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতেই ওই খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেজন্য বরাদ্দের বেশি অর্থ দেয়া হবে। চলতি মূল বাজেটে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, গরিব জনগণকে সাশ্রয়ী দামে খাওয়ানোর জন্য খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করে সরকার। সেজন্য চাল-আটাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। আগামী বাজেটে সেজন্য আগের চেয়ে এক হাজার কোটি বাড়িয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। রফতানিকে উৎসাহিত করতেও ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটেও সমপরিমাণ টাকা দেয়া হয়। মূলত তৈরি পোশাক পণ্য রফতানিতে ওই সহায়তা দেয়া হয়। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আগের মতো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাষ্ট্রের জন্য ভর্তুকি অবশ্যই দরকার। তবে সেজন্য সরকারকে আগে টার্গেট গ্রুপ ঠিক করা জরুরি। ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেত্রে তার কাঠামোগত সংস্কারও প্রয়োজন। এদেশের কৃষক চায় তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম। সেটি নিশ্চিত করতে পারলে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *