পাথেয় রিপোর্ট : দলবেঁধে আসা এবং পোশাক পরিবর্তন করে অবৈধ পন্হায় যাওয়া-আসার কারণেই বারবার এদেশের কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ধরা পড়ছে বলে অভিমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মহাসচিব মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমী। তিনি বলেন, ভারতে অবস্হানরত অন্যান্য বাঙালি ছাত্রদেরও উচিৎ সীমান্ত পরিস্হিতি ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং এভাবে দলবেঁধে না আসা।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ কওমী মাদরাসা নিয়ন্তা হাইআতুল উলইয়ার এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার। আইনীভাবে আটক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর জমিয়ত কার্যালয়ে মাওলানা কাসেম এ অভিমত জানান।
জামিআ মাদানিয়া খুলনার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী দেওবন্দ আসা শিক্ষার্থীরা সীমান্তে নির্মমতার শিকার হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্বীকৃতির আন্দোলন করেছিলাম দারুল দেওবন্দ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের এই নির্মমতার শিকার যাতে না হতে হয়।
প্রসঙ্গত, বেশ কদিন ধরেই দেওবন্দ ফিরতী বাংলাদেশি ছাত্রদের আটকের ঘটনা শোনা যাচ্ছে। দফায় দফায় ছাত্রদের আটক ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের কওমী শিক্ষাঙ্গন। অবৈধ পথে ফিরতে গিয়েই বারবার ভারতীয় পুলিশের কাছে ধরা পড়ছে বাংলাদেশী ছাত্ররা। বৃহস্পতিবারও আটক হয়েছে চারজন।
বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪পরগনা জেলার বসিরহাটের বাদুড়িয়ার চন্ডিপুর এলাকা থেকে ইলিয়াস হোসেন (২২), তানভীর হোসেন (২২), বিল্লাল হোসেন (২৪) এবং এহসানুল হক (২১) নামে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়।
ইলিয়াস ঢাকার, তানভীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, বিল্লাল পটুয়াখালীর এবং এহসানুল গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। উল্লেখ্য, ইলিয়াস হোসেন ২০১৭-১৮ সনে বাংলাদেশে কওমী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা বাংলাদেশে ১ম স্হান অধিকারী কৃতী ছাত্র।
এদিকে পুলিশ জানায়, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ওই চার যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে এই চার বাংলাদেশি ছাত্রকে উত্তর২৪পরগনা জেলার বসিরহাটের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এলাকা বাদুড়িয়ার চন্ডিপুরের কাছে ইতস্তত ঘুরতে দেখা গেলে সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয় মানুষজন এলাকায় টহলরত পুলিশের কাছে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ওই চার জনকে বাদুড়িয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা সবাই বাংলাদেশি। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
বাদুড়িয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা বাপ্পা মিত্র জানান, ওই চার বাংলাদেশি ছাত্রের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা ছিল। ‘চোরাইপথে’ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। ফলে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কী কারণে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে ভারতে ছিল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আটককৃত কওমী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অতিসত্বর হাইআতুল উলইয়া কর্তৃক অবস্থান পরিষ্কার করা উচিৎ। নইলে গ্রেফতারকৃত সাধারণ ছাত্ররা দেশীয় সরকারি আইনে আরও বড় কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘জমিয়তে উলামা হিন্দ’ আয়োজিত ‘আমনে আলম কনফারেন্স’ এ যোগ দিতে ভারত সফরে গেলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ’র সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে দারুল উলুম দেওবন্দে পড়তে যাবার ব্যাপারে আলাপ করেছিলেন। পরে বাংলাদেশের কওমী শিক্ষা বোর্ড থেকেই কোনো সাড়া-শব্দ না হওয়ায় এ উদ্যোগটি তেমন বেগবান হয়নি। অথচ, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসার সঙ্গে দারুল উলূম দেওবন্দের শেকড় সম্পর্ক আছে বলে ছাত্রদের শিক্ষা দেয়া হয়। তাই সেখানে পড়তে যাওয়ার বিষয়টিও সমন্বিত কওমী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি নির্দিষ্ট ফয়সালায় আসা উচিৎ। তাহলেই কেবল ছাত্ররা উচ্চতর পড়াশুনায় নির্বিঘ্নে যেতে পারবে দারুল উলুম দেওবন্দে।
দেশের শীর্ষ আলেমদের অনেকেই মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, আটককৃত কওমী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অতিসত্বর হাইআতুল উলইয়া কর্তৃক অবস্থান পরিষ্কার করা উচিৎ। নইলে গ্রেফতারকৃত সাধারণ ছাত্ররা দেশীয় সরকারি আইনে আরও বড় কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন।
——————————-/
সূত্র : সদরুদ্দীন মাকনুন
গ্রন্থনা : কাউসার মাহমুদ
সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির