নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মাবাদ
মনের আবেগ ও ভাব প্রকাশের জন্য আল্লাহ মানুষকে ভাষা দিয়েছেন। ভাষা হলো আল্লাহ পাকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কুরআনুল করীমে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে ‘বায়ান’ অর্থাৎ ভাবপ্রকাশের গুণ দিয়েছেন। আর যুগে যুগে আম্বিয়া কিরামকে হেদায়েতের বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন স্ব স্ব গোত্রের ভাষায়। শেষ নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন ভাষার মু’জিযা নিয়ে আর তা হলো আল্লাহর কালাম কুরআন পাক। কিয়ামত পর্যন্ত সবাইকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো কালামে পাকের সাহিত্যমানের। আজ পর্যন্ত কেউ মুকাবিলা করতে পারেনি এই চ্যালেঞ্জের আর ভবিষ্যতেও পারবে না কেউ।
ওলামায়ে কেরাম হচ্ছেন বানু ইসরাইলের নবীগণের মতো। তাঁরা নবীজীর ওয়ারিস। সুতরাং তাঁদেরকেও হতে হবে স্ব স্ব ভাষার সাহিত্য ক্ষেত্রে মুজিযানা ভাষার অধিকারী। ফার্সী, উর্দু প্রভৃতি ভাষার ক্ষেত্রে আলিমরা এই দায়িত্ব সফলতার সাথে আঞ্জাম দিয়েছেন। কিন্তু নির্মম সত্য হলো আমাদের ভাষার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি। অথচ ইতিহাস সাক্ষী একদিন এই দেশের আলিমগণই- এ দেশের মুসলিমরাই প্রকৃতপক্ষে জন্ম দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের। বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীর চক্রান্তে তা আজ আমাদের হাতছাড়া। যা হোক মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআনী মূল্যবোধই ’৫২ সালে উদ্বুদ্ধ করেছিল এ দেশের মুসলিম দামাল ছেলেদের। আজকে ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে অনেকেই অনেক কথার অবতারণা করে থাকেন। তাই ভাষা আন্দোলনের সৈনিক পুরষ অধ্যাপক আবদুল গফুরের কাছে সুস্পষ্ট প্রশ্ন রেখেছিল পাথেয়। আবদুল গফুরের দ্ব্যর্থহীন জবাব দিয়েছেন এর। ভাষা দিবসকে সামনে রেখে এ সংখ্যায় পত্রস্ত হলো পাথেয়কে দেয়া অধ্যাপক আবদুল গফুরের এই বিশেষ সাক্ষাতকারটি। সাথে সাথে ওলামায়ে কেরামের দরবারে আরজি হিসেবে পত্রস্থ হলো তরুণ আলিম মাওলানা মুফীযুদ্দীন বিদ্যাগঞ্জীর ‘দীনি শিক্ষায় মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা’ লেখাটি।
হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ.-এর ওয়াজ এককালে প্রকাশ হতো মাসিক নেয়ামত-এ। কিন্তু বর্তমানে হারিয়ে গেছে সে ধারা। অথচ হেদায়েতের সামান ও পাথেয় ছিল তা। তাই পাথেয় এ সংখ্যা থেকে নিয়মিত শুরু করেছে এই পবিত্র সিলসিলা বা ধারাটির। সাথে সাথে এ সংখ্যায় বিশেষভাবে পেশ করা হলো ইসলামী জন-জাগরণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সাম্যাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সেনানী হযরত শায়খুল আলম শায়খুল হিন্দের সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত আলেখ্য। আল্লাহর শোকর ড. কাজী দীন মুহাম্মদ এখনো গুটাননি তাঁর দস্তারখান। আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি যতদিন থাকবেন পাথেয় তাঁর অনুগ্রহে ধন্য হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সবার কাছে দুআর আরজ রইলো। আল্লাহ আমাদের তওফীক দিন। আমীন।
ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ ইংরেজীতে লিখিত সম্পাদকীয়