মাঠে ২৫ লাখ টন লবণ চাষের লক্ষ্য নিয়ে চাষীরা

মাঠে ২৫ লাখ টন লবণ চাষের লক্ষ্য নিয়ে চাষীরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে লবণ চাষে নেমেছেন কক্সবাজারের চাষীরা। দেশের ২৫ দশমিক ২৮ লাখ টন লবণের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে চান জেলার ৩৯ হাজার ৪৮৭ জন লবণচাষী। এজন্য ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ করছেন তারা। তবে তাদের আশঙ্কা, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হলে তারা যথাযথ দাম পাবেন না। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষীরা। ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে।

কক্সবাজারে এবার ধান কাটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে লবণ চাষের কর্মযজ্ঞ। গত মাসে লবণ মৌসুম শুরুর পর থেকে বাঁশখালী ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এরই মধ্যে ৯৪০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানি করে দেশের চরম ক্ষতি করছে। ফলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে লবণচাষীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন শঙ্কা নিয়েই লবণ চাষ করে যাচ্ছেন তারা।

এবারের প্রথম লবণ উৎপাদন হয়েছে বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়। এই উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ঘূর্ণিঝড় হামুন ও মিধিলির প্রভাবে ৪০ থেমে ১০৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে লবণ উৎপাদন ও মাঠ প্রস্তুতিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। বিস্তীর্ণ এলাকায় রোদের মধ্যে কাজ করেও তাদের চেহারায় তেমন ক্লান্তির ছাপ নেই। চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র হচ্ছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী। এসব এলাকায় উৎপাদিত লবণ দিয়ে সারা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। কিন্তু সরকারকে ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের ক্ষতি করা হচ্ছে।

টেকনাফের কাটাখালী, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, নয়াপাড়া, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ওয়াব্রাং, সিকদার পাড়া, নাটমুরা পাড়া, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী, লেদা, মোছনী পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া, সিকদারপাড়া, নয়াপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলসহ উপকূলীয় এলাকায় লবণচাষীদের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তারা বলছেন, দেশে যথেষ্ট পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়। তারাও তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের দাবি, বাইরে থেকে যেন কোনোভাবেই আমদানি করা না হয়।

কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ একটি লবণ মাঠে কথা হয় চাষী শাহেদ উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আগে মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু পানির কারণে মাঠ উপযোগী করতে পারিনি। এরপর ১০ দিন হচ্ছে মাঠে নেমেছি। মাঠ প্রায় প্রস্তুত। তবে খালে ও মাঠে লবণপানি উপযোগী না হওয়ায় লবণ উঠতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’

অন্য চাষী মো. শরীফ জানান, তিনি ১৫ দিন আগে চারজন চাষী নিয়ে মাঠ প্রস্তুতে নেমেছেন। এসব মাঠে লবণ উৎপাদনে আরো সাতদিন সময় লাগবে। তার মতে, দেশে প্রচুর লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে আমদানির ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমদানির বদলে চাষীদের সরকারিভাবে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে উৎপাদন আরো বাড়ত। এতে সরকারেরও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা ২৫ দশমিক ২৮ লাখ টন। মৌসুমের শুরুতে মাঠ পর্যায়ে মজুদ রয়েছে ১ দশমিক ৬০ লাখ টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে চাহিদা ছিল ২৩ দশমিক ৮৫ লাখ টন। ওই মৌসুমে উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন।

২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণের মূল্য ধরা হয়েছে মণপ্রতি ৫২৬ টাকা এবং টনপ্রতি ১৩ হাজার ১৪৬ টাকা। এছাড়া বৃহৎ লবণ কেন্দ্র রয়েছে কুতুবদিয়ার লেমশিখালী, উত্তর নলবিলা, মহেশখালীর গোরকঘাটা, মাতারবাড়ি, ঈদগাওর গোমাতলি, পেকুয়ার দরবেশকাটা, চকরিয়ার ডুলাহাজারা ও ফুলছড়ি, টেকনাফ, বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনায়।

লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় কক্সবাজারের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী জানান, নভেম্বরের শুরু থেকে ধানের চাষ প্রায় শেষ। এর পর থেকে চাষীরা লবণ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বৃষ্টি না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারা উপকৃত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *