মানবিক কাজ করেও গ্রেপ্তার হতে হয় যে রাজ্যে

মানবিক কাজ করেও গ্রেপ্তার হতে হয় যে রাজ্যে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অ্যাম্বুল্যান্স প্রচুর টাকা চাইছে। মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে রওনা দেন বাবা-ছেলে। বিনা পয়সায় দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয় একটি সংস্থা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল পুলিশ।বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, উপকারীকে বাঘে খায়। সেই প্রবাদের বাস্তব রূপ কি দেখা গেল জলপাইগুড়িতে? উপকার করতে গিয়েছিলেন অঙ্কুর দাস। সেই উপকার করতে যাওয়াই কাল হলো। তাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।

জলপাইগুড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের জায়গা ক্রান্তি থেকে লক্ষ্মীরানি দেওয়ানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জলপাইগুড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানেই মারা যান। রাতের বেলায় মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে যান মৃতার স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান।

কিন্তু তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, তিন হাজার টাকা না দিলে কোনো অ্যাম্বুল্যান্স যাবে না। ক্রান্তি থেকে জলপাইগুড়ি আসার সময় জয়কৃষ্ণের অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া লেগেছিল নয়শ টাকা। তাদের তিন হাজার টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। বাবা ও ছেলে তখন ঠিক করেন, মৃতদেহ ঘাড়ে করে হেঁটে যাবেন।

সকালবেলা তারা হাঁটা শুরু করেন। খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। মৃতদেহ নামিয়ে রেখে পাশে বসেন তারা। তখন কিছু মানুষ বলেন, গ্রিন জলপাইগুড়ি নামে একটি সংগঠন শব বহনকারী গাড়ি করে মৃতদেহ বিনা পয়সায় বাড়ি পৌঁছে দেয়।

খবর পাওয়ার পর মৃতদেহ নিয়ে তারা ক্রান্তির বাড়িতে পৌঁছে দেন। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। বাবা ও ছেলের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই সক্রিয় হয় জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংস্থার সম্পাদক দিলীপ দাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। সরকারকে কালিমালিপ্ত করার কাজ চলছে। গ্রিন জলপাইগুড়িও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ যথারীতি গ্রিন জলপাইগুড়ির অঙ্কুর দাসকে গ্রেপ্তার করে। সেটাও তার ছেলের জন্মদিনের দিন। আর যে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা বললো লক্ষ্মীরানির দেহ তিন হাজার টাকার কমে বাড়ি পৌঁছে দেবে না, তাদের কিছু হলো না।

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের আসল ছবিকে সামনে তুলে আনছে। বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের দুর্নীতি চক্র গজিয়ে উঠেছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। মানবিক অঙ্কুরের বিরুদ্ধে নেয়।

অঙ্কুর দাসকে পুলিশ নিজের হেফাজতে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচারক পুলিশের আর্জি খারিজ করে অঙ্কুরকে জামিন দিয়েছেন।

  • সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *