মানবিক টিকাদান কর্মসূচির বিরোধিতা বোকামি

মানবিক টিকাদান কর্মসূচির বিরোধিতা বোকামি

মানবিক টিকাদান কর্মসূচির বিরোধিতা বোকামি

সচেতনতা জরুরি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মানবিক কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বিশ^জুড়ে চলা সব মানবিকতার পক্ষে লড়াই করছে এ দেশ। এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় টিকা সংগ্রহ এবং দ্রুত তা প্রয়োগের ওপর জোর দিতে দেয়া। টিকা দিয়ে মানুষকে সহজভাবে করোনার মহামারী থেকে পরিত্রাণের সুযোগ করে দিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে না পারলে অপপ্রচারের স্বীকার হয়ে তারাই বিপদগ্রস্ত হবে। রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের উচিত মানবিক এই সেবার পক্ষে কথা বলা।

অপপ্রচারের স্বীকার হয়ে দেশে চলমান এমন অনেক টিকাই সাধারণ মানুষ নিতে চায়নি। এমন টিকাও আছে, শিশুরা নেওয়ার পর একটানা দুইদিন কান্না করে। কিন্তু মানুষ জেনে গেছে, এটা টিকা দিতে পারলে বাচ্চারই উপকার। এখন কিন্তু টিকাদান থেকে মহিলারাই বিরত হন না। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ২১ লাখের বেশি। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধেরও অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় টিকা প্রদানের ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০০ দিনে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তার অর্থ দৈনিক গড়ে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।

আমাদেরও কমপক্ষে ১০ কোটি মানুষকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে টিকা দিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে এসেছে উপহার হিসেবে ভারতের দেওয়া ২০ লাখ চার হাজার টিকা। ক্রয়চুক্তির অধীনে আরো ৫০ লাখ ডোজ টিকা আগামীকাল সোমবার এসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে। এই ৭০ লাখ টিকা নিয়েই বুধবার শুরু হবে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিকভাবে ৪০০ থেকে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে এবং তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর শুরু হবে জনসাধারণের মধ্যে টিকা প্রদান।

যেকোনো টিকারই কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। জানা যায়, করোনার টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেগুলো গুরুতর কিছু নয়। অথচ এই টিকা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ফলে অনেকের মধ্যেই টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের মনে রাখতে হবে, টিকার সাফল্য বহুলাংশেই নির্ভর করে শতভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার ওপর। টিকা কর্মসূচির সফলতার কারণেই দুনিয়া থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল করা গেছে।

বাংলাদেশ থেকেও পোলিও, কলেরা প্রায় নির্মূল করা গেছে। করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি সফল হলে আমরাও করোনামুক্ত হতে পারব। কিন্তু কিছু মানুষ যদি টিকার আওতার বাইরে থেকে যায় তাহলে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, শরীরে ভাইরাস বহন করবে এবং অন্যদের সংক্রমিত করবে। সংক্রমণ বছরের পর বছর চলতে থাকবে। জানা যায়, অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যথেষ্ট কমে গেছে। তাই এখন আর টিকা না নিলেও চলবে। এমন ভাবনা শুধু ভুল নয়, বড় ক্ষতিরও কারণ হবে। অনেক দেশেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পর আবার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশে যে আবার তা ছড়িয়ে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? টিকা সংগ্রহ এবং দ্রুত তা প্রয়োগের ওপর আমাদের আরো জোর দিতে হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পাশাপাশি অন্যান্য টিকাও সংগ্রহ করতে হবে। কারো সঙ্গে যোগসাজশে করোনার টিকা দেশে উৎপাদন করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি সবাই যাতে স্বেচ্ছায় টিকা নেয় সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *