মাহফিল আয়োজক কমিটির সাতকাহন

মাহফিল আয়োজক কমিটির সাতকাহন

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

মাজফিল আয়োজক কমিটিতে কিছু অতি উৎসাহী লোক থাকে। যারাই সর্বনাশ করে বক্তাকে। একদম তলানিতে নামিয়ে দেয়। অতি জযবায় বক্তাকে দাওয়াত দিয়ে এরপর লাপাত্তা। খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি মাহফিল ক্যান্সেল হলেও বক্তাকে জানায় না। কোথাও বক্তা মাহফিলের স্থানে পৌঁছানোর পরেও তাঁর সাথে সন্মানজনক আচরণ করা হয় না। বক্তাকে বসার জায়গা পর্যন্ত দেওয়া হয় না। এমনও ঘটনা ঘটে, বক্তাকে খাবার-দাবার দেওয়া দূরের কথা, এককাপ চা খাওয়াতে তারা হিমশিম খায়। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায়, মাহফিল শেষে আয়োজক কমিটির কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সবাই চম্পট দেয়। পরিশেষে বক্তাকে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। অথচ দুইশ/তিনশ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে এরপর দু ঘন্টা ওয়াজ ফরমানোর পরেও খালি হাতে গাড়ি নিয়ে বাড়ি আসতে হয়। হাদিয়া তো দূরের কথা, তেল খরচও জোটেনা।

হর-হামেশা এগুলো ঘটছে। কিন্তু এগুলোর কোনো বিচার হয় না। কেননা, ওরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ বিষয়ে কেউ কোন কথাও বলে না। কেননা, অধিকাংশ বক্তা দ্বীনের জন্য কাজ করেন। আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের জন্য তাদের এই পথ চলা। কিন্তু এই সুযোগে কিছু কিছু মাহফিলের আয়োজক আলেম-উলামাদের সাথে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন।

আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলছি। অনেক বছর আগে এক এলাকায় ওয়াজ করতে গিয়েছিলাম। ওয়াজ মাহফিলের স্থানটি আমার মাদ্রাসা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। তাদের পীড়াপীড়িতে দাওয়াত গ্রহণ করলাম। তখন মোবাইল ভালো করে চালু হয়নি। আমি যথারীতি মাহফিলের জন্য রওয়ানা হলাম। আসর নামাজের সময় সেই মাহফিলের স্থানে গিয়ে হাজির। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানে মাহফিলের নাম-গন্ধ নেই। আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী খবর? আজকে আপনাদের এখানে তো ওয়াজ মাহফিল হওয়ার কথা। কোনো আয়োজন দেখছিনা যে? তারা বলল, হুজুর! এক সপ্তাহ আগে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একারণে কোনো আয়োজন নেই। আমি সেই দাওয়াতকারীকে খুঁজলাম। তারা বলল, তিনি ঢাকা চলে গেছেন। আমি বললাম, আপনাদের মাহফিল হবে না, এটা আমাকে জানালেন না কেন? তারা সবাই চুপ।

আমাদের এলাকায় একজন খ্যাতনামা মুফাচ্ছির ছিলেন। যিনি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সব জায়গায় ওয়াজ করতেন। তিনি আমাকে একটা ঘটনা শুনায়েছিলেন। একবার তিনি এক এলাকায় ওয়াজ করতে গিয়েছেন। সেটাও তার বাড়ি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দুরে। তিনি সেখানে প্রধান বক্তা। ওয়াজ করার পর রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সকালে যখন বাড়ি ফিরবেন, তখন মাহফিলের সভাপতি সেক্রেটারী কাউকে খুঁজে পেলেন না। কেউ তাঁর সাথে দেখাও করল না, অথচ এত রাস্তা অতিক্রম করে সেখানে গিয়েছেন। ফেরার পথে কেউ সৌজন্যমূলক দেখাও করল না এবং কথাও বলল না।

বিগতবছর একজন বক্তার মুখ থেকে একটা ঘটনা শুনলাম। বাংলাদেশের কোন এক অঞ্চলে ওয়াজ করতে গিয়ে তিনি সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন। ওয়াজ করা তো দূরে থাক, বক্তার জান নিয়ে টানাটানি। এভাবে বহু ঘটনা ঘটছে। সব খবর সামনে আসে না। বিশেষ করে বক্তার সাথে যেসব দুর্ব্যবহারগুলো করা হয় সেসব নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধুমাত্র কোন বক্তা কোথায় কোনো ত্রুটি করল, সেটা নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করতে দেখি। কিন্তু একজন আলেমের সাথে যেসব অমানবিক আচরণ হচ্ছে, সেগুলো আমাদের আলোচনার বাইরে।

এজন্য বড় খতরনক ওয়াজ মাহফিলের কিছু কিছু আয়োজক। অতি উৎসাহী এবং দুরভিসন্ধিমুলক কাজে তারা মশগুল থেকে আলেমদের হেনেস্তা করে যায়। অবলীলায় আলেম-উলামার ইজ্জত লুন্ঠন করে যাচ্ছে। সুতরাং সতর্ক হওয়া দরকার সকলের। বক্তা ভাইদের উচিত বুঝে-শুনে দাওয়াত নেওয়া। যেখানে-সেখানে এবং অপরিচিত মহলে দাওয়াত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকলেই ভালো হয়। কিছু কিছু আয়োজকের অসৎ উদ্দেশ্য যেন সফল না হয়, সে ব্যাপারে সাবধান হওয়া জরুরী।

পরিশেষে মাহফিল আয়োজক কমিটির সকলের সুমতি হোক, সেই সাথে বক্তা ভায়েরাও সঠিক পদ্ধতিতে দ্বীনের কাজে এগিয়ে যাক সেই কামনা রইল। আল্লাহ তায়ালা সকলকে কবুল করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

আরও পড়ুন: ওয়াজ মাহফিলের রেশ যেন কওমী মাদ্রাসার উপরে না পড়ে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *