মিসরে শিক্ষিকাদের নেকাব পরায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

মিসরে শিক্ষিকাদের নেকাব পরায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

পাথেয় টোয়েন্টিফাের ডটকম : নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ। হোক শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ গৃহিণী। এ ফরজ বিধান পালনের অন্যতম উপায় নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মিসরের সর্বোচ্চ আদালত। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে মিসরসহ বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে কঠোর সমালোচনার ঝড়।

শিক্ষিকাদের নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মিসরের সর্বোচ্চ আদালত। গত শনিবার মিসরের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক এ আপলি নিষ্পত্তির রায় ঘোষণা করেন। এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিশ্বব্যাপী শুরু হয় সমালোচনার ঝড় ও প্রতিবাদ।

আদালতের যুক্তি, নেকাব শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক ও যোগাযোগের বিষয়টি সহজ ও ফলপ্রসূ হওয়ার অন্তরায়। এ যুক্তি দেখিয়ে নেকাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। আদালত আরও জানান, নেকাবের নিষেধাজ্ঞা শুধু শিক্ষিকাদের জন্য, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নয়।

২০১৬ সালে মিসরের সর্বোচ্চ আদালতে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের নেকাব পরা নারী শিক্ষিকারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জারি করা নেকাব নিষেধাজ্ঞার আদেশ বাতিলে আপিল করেন। শিক্ষিকাদের করা আপিল মামলা নিষ্পত্তিতেও নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে আদালত চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।

নেকাব পরা নারী শিক্ষিকাদের আইনজীবী আহমাদ মেহরান বলেন, ‘কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ নারী ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। শনিবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেই রায় দেন। এ রায়ে সাধারণ জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তার পরও জনসম্মতির বাইরে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দেন। যার কোনো কারণ আমাদের জানা নেই।

উল্লেখ্য, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জাবির নেসার ২০১৩ সালের আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের নেকাব পরায় নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ইসলামপন্থী মুরসি সরকার ক্ষমতায় এলে কিছুটা পিছু হটেন জাবির নেসার।

২০১৩ সালে মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হলে এ উপাচার্য দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের নেকাব পরায় নিষেধাজ্ঞা আইন বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং প্রশাসনিকভাবে নেকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এ দিকে যেসব শিক্ষিকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেকাব পরেন, তারা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ জন নারী শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত। যারা নিয়মিত নেকাব পরেন।

শিক্ষিকাদের নেকাব পরায় প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারির পর নারী শিক্ষিকারা ২০১৬ সালে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। অবশেষে আদালত গত ৪ জানুয়ারি উপাচার্য জাবির নেসারের প্রশাসনিক আদেশ বহাল রেখেই রায় দেন।

আইনজীবী আহমাদ মেহরান বলেন, ‘আদালতের এ রায় বাস্তবায়ন সহজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আদালত বহাল রাখলেও শিক্ষিকারা নেকাব জড়িয়েই কাজ করে আসছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে তারা উন্নতি করেছেন। নেকাব পরা শিক্ষিকারাও আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইসলামিক স্কলার ও বিশেষজ্ঞরা মিসরের সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়কে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন। মিসরকে বিধর্মী শক্তির ষড়যন্ত্রের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করা হয়েছে।

এ রায়কে সিসি সরকারের কোনো অশুভ পরিকল্পনার অংশও বলছেন অনেকে। এ রায়ে মিসরসহ বিশ্বব্যাপী চলছে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড়। তারা এ রায় প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান।

সূত্র : আল জাজিরা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *