মীর মশাররফ হোসেন

মীর মশাররফ হোসেন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মীর মশাররফ হোসেন উনিশ ও বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল সাহিত্যিক। সেই সময়েই তিনি চিন্তা-ভাবনায় এগিয়ে থাকা একজন মানুষ ছিলেন। জমিদার বংশে জন্মেছেন, কিন্তু নাটক লিখেছেন লম্পট, অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে। জন্মসূত্রে মুসলমান হলেও কলম ধরেছেন মুসলমানের গোমাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে। আজীবন যেকোনো ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের পক্ষে সারা জীবন সক্রিয় ছিলেন।

আত্মজীবনীতে কোনো কিছুই লুকাননি। নিজের কৈশোরেই এক যুবতী পরিচারিকার সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেছেন অকপটে, ‘প্রতিজ্ঞা করিয়াছি সত্য কথা বলিব। দাসী, বান্দি কর্তৃকই আমার চরিত্র প্রথম কলঙ্ক রেখায় কলঙ্কিত হয়।’

কুষ্টিয়ার ইংরেজি স্কুল, ফরিদপুর পদমদীর স্কুল, কৃষ্ণনগর স্কুল হয়ে কলকাতা—প্রথাগত পড়াশোনায় অনবরত ছন্দপতন ঘটেছে। পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি।

লেখালেখির শুরু ‘সংবাদ প্রভাকর’ ও ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র মাধ্যমে। ১৮৭৩ সালেই প্রকাশিত ‘জমিদার দর্পণ’ নাটক তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। তবে তাঁর সাহিত্যকীর্তির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো, ‘বিষাদ-সিন্ধু’। ইতিহাসাশ্রয়ী এই উপন্যাস রচনার সময় তিনি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে বেগম করিমুন্নেসার জমিদারির ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন।

‘গো-জীবন’ নামে তাঁর বিতর্কিত রচনাটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। তাঁর আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ব্যঙ্গরচনা ‘গাজী মিয়ার বস্তানী’, পাঠ্যবই ‘মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা’ আজও উল্লেখের দাবি রাখে।

১৯৬৫ সালে ১৭ বছর বয়সে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর বিয়ে হয় আজিজুন্নেসার সঙ্গে। মশাররফ বুঝলেন তিনি চক্রান্তের শিকার। অসুখী দাম্পত্যজীবন, তাই সম্পর্ক ছেদ করলেন। ৯ বছরের মাথায় ১৮৭৪ সালে তিনি বিয়ে করলেন কুলসুমকে। তাঁর বয়স তখন ২৬ আর স্ত্রী কুলসুমের মাত্র ১২ বছর। কুলসুম ছিলেন তাঁর যথার্থ জীবনসঙ্গী। ‘আমার জীবনীর জীবনী কুলসুম জীবনী’ বইটি তার বড় প্রমাণ।
১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *