পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঈমানের মূল রাসুলের প্রতি আস্থা জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ঈমান হল রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থার নাম।
তিনি বলেন, রাসুলে পাক সা. এর উপর আমার আস্থা রয়েছে বিধায় তার যেকোন কথা আমি বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিই। কেউ যদি বলে যুক্তিতে সাব্যস্ত হয়েছে বিধায় বা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিধায় আমি তাঁর কথা মানি; তাহলে কখনো সে মুমিন হতে পারবে না। মুমিন হওয়ার জন্য শর্ত হল রাসূলের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা থাকা। রাসুলের প্রতি ভরসা করে তার কথাকে আমার বিশ্বাস করতে হবে, যুক্তির নিরিখে নয়।
শুক্রবার (০৬ নভেম্বর) খিলগাঁও হাজীপাড়া ঝিল মসজিদে জুমার বয়ানে তিনি এসব বলেন।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, আল্লাহর সেই পরিচয় আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, যেই পরিচয় রাসূল আমাকে দিয়েছেন। কুরআন বিশ্বাস করি কারণ রাসুল সা. বলেছেন এটা আল্লাহর কালাম। আল্লাহ ওয়ালারা বলেন, আল্লাহর উপর ঈমান আনার আগে রাসুলের উপর ঈমান আনতে হবে। কারণ আল্লাহর যাত ও সিফাত সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। রাসুল আমাকে যেভাবে আল্লাহকে চিনিয়েছেন, যেভাবে আমল করতে বলেছেন, বিশ্বাস করতে বলেছেন আমাকে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।
বর্তমান পৃথিবীর চলমান বিজ্ঞানের মূল উৎস মুসলমানেরা উল্লেখ করে শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, প্রাচীন আমলে গ্রীক বিজ্ঞানকে মুসলমানেরা জীবিত রেখেছে ও পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিজ্ঞান নিয়ে নানামুখি গবেষণা করেছে। তাদের রেখে যাওয়া সেই সূত্রগুলোর উপর কাজ করেই বর্তমান বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতা সাধন হয়েছে। ইমাম রাযী রহ. এর গ্রীক বিজ্ঞানে বেশ ব্যুৎপত্তি ছিল। তিনি বিজ্ঞান ও যুক্তির নিরিখে মানুষকে ইসলাম বোঝানোর লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে কুরআনের তাফসির লেখেন। কাজ নিঃসন্দেহে বিরাট কিন্তু সিদ্ধান্তটা ছিল ভুল। কারণ বিজ্ঞানে পরিবর্তন আসে। হাজার বছর আগের বিজ্ঞান আইনস্টানের থিওরির কাছে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভুল প্রমাণিত হয়েছে সূত্রাবলি। অন্যদিকে কুরআনে কোন পরিবর্তন নেই। তাই পরিবর্তিত ভুলের উপর ভিত্তি করে চিরায়ত অপরিবর্তিত কুরআনকে প্রমাণ ও বোঝানো যায় না। ইমাম রাযীর চিন্তা ছিল ইমান সম্পর্কে একটা যুক্তি না থাকলে তো ইমান পোক্ত-ই হয় না।
শায়খুর হাদীস বলেন, নবী যা বলেছেন সেটাই ধর্ম, সেটাই ইসলাম। নবী যদি বলেন, তোমরা ইস্তেঞ্জা করার সময় ঢিলা ব্যবহার কর তবে সেটাই ইসলাম। নবী যদি বলেন, তোমরা মসজিদে ঢোকার সময় ডান পা দাও তবে সেটাই ইসলাম। এখানে নবীর প্রতি প্রমাণ উপস্থাপনের দাবি করার কোন অবকাশ নেই। নবীর উপর পূর্ণ ভরসার নাম-ই ইসলাম। এ কারণেই হযরত আবু বকর রা.কে সিদ্দীক বলা হত। মিরাজের ঘটনা শোনা মাত্রই তিনি শুধু জানতে চেয়েছিলেন, এটা কি রাসুল সা. বলেছেন? উত্তর শোনা মাত্রই বললেন, তাহলে এটাকে আমি সবচাইতে বেশি বিশ্বাস করি। এ কারণেই তিনি সিদ্দীক।
ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একমাত্র উলামায়ে কেরাম জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, প্রতিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থাকে। ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞদেরকে আমাদের দেশে আমরা উলামায়ে কেরাম বলি। তবে সে বিশ্বাসভাজন আস্থভাজন কিনা তা খতিয়ে দেখবেন অবশ্যই। দশজনকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন। যেমন একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারকে বেছে নিতে আপনি তার অভিজ্ঞতার খবর নেন, রেফারেন্স নেন। এভাবে আস্থাভাজন একজন আলেমকে আপনি বেছে নেবেন। কিন্ত হ্যা, একবার আস্হাভাজন পেয়ে গেলে তাকে আপনার আর প্রমাণ উপস্থাপনের দাবি জানানোর সুযোগ নেই। বলতে পারবেন না, বুখারীর কোথায় আছে, মুসলিমের কোথায় আছে, হাদীসের কোথায় আছে? এর কোন অবকাশ নেই।
সালাফিদের অনাস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কাজ বর্তমান সময়কার ইলম-কালামহীন মুর্খের দল সালাফিদের। এক লাইন আরবি শুদ্ধ করে পড়তে পর্যন্ত পারে না তারা। হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় মনে করে হাদীস বলতে কেবল বুখারীকেই বোঝায, হাদীস বলতে কেবল মুসলিমকেই বোঝায়, সিহাহ সিত্তাকেই বোঝায়। অথচ এই এক হাদীস সম্পর্কে কয়েক হাজার কিতাব লেখা হয়েছে। কেবল বুখারী মুসলিম তিরমিযীতে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আস্থাভাজন কাউকে পেয়ে গেলে সেখানে আপনার আর কোন প্রশ্ন করার অবকাশ নেই। বিনা বাক্যব্যয়ে তার কথা অনুযায়ী জীবনকে ইসলামের পথে পরিচালিত করুন।
কারো না কারো সাথে দিলের সম্পর্ক গড়ে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জমিয়তে উলামার চেয়ারম্যান বর্তমান ফেতনার সময়ে ইসলামকে খেলনা বানানো থেকে সবাই যাতে বেঁচে থাকতে পারে সেজন্য দুআ করেন।
/এএ