মূর্খ বক্তাদের দ্বারা ইসলাম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে

মূর্খ বক্তাদের দ্বারা ইসলাম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

ইসলাম বেশী ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে মূর্খ ওয়ায়েজ তথা ইলমহীন ওয়ায়েজদের দ্বারা। ওরাই জাতিকে ভুল মেসেজ দিচ্ছে। এর দ্বারা গোমরাহীতে নিমজ্জিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেক সময় বক্তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মানুষ দ্বীনহীন হয়ে পড়ছে। বহু দ্বীনদার-আমলদ্বার ব্যক্তিবর্গ সহী দ্বীন থেকে সরে গিয়ে বেদআত-শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ হচ্ছে। এজন্য মূর্খ ওয়ায়েজ বা বক্তাদের থেকে সাবধান হওয়া দরকার। তাদেরকে বয়কট করা সময়ের দাবী।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। এদেশের মানুষ ইসলাম প্রিয়। তারা ইসলামকে ভালোবাসে। আলেম-উলামাদের ইজ্জত করে, সন্মান করে। তারা রাজনৈতিক ভাবে বিভক্ত থাকলেও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনে গড়ে ওঠে সবাই। সকলের সভ্যতা-সংস্কৃতি ইসলামী ভাবধারার। আজও এদেশের লাখো মসজিদ থেকে একযোগে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। দল বেঁধে মানুষ মসজিদে যায়। এদেশের কোটি কোটি তাওহিদী জনতা একসাথে সিয়াম পালন এবং ঈদ উদযাপন করে থাকে। মোটকথা ইসলামের উর্বরভূমি আমাদের সোনার বাংলাদেশ। দ্বীন ইসলামের এরকম সতেজ-সুমধুর জায়গা খুব কম পাওয়া যাবে এ পৃথিবীতে।

এদেশের অধিকাংশ মানুষ আলেম-উলামা এবং পীর মাশায়েখদের ভক্ত। তারা অকপটে আলেম-উলামা এবং দ্বীনের রাহবারদের ভালোবাসে। এখনো এদেশের সাধারণ জনতা তাদের গাছের প্রথম ফল-ফলাদি, সবজি, ক্ষেতের প্রথম ফসল আলেম-উলামা এবং পীর মাশায়েখদের খেদমতে পেশ করে। আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের হাদিয়ার মাধ্যমে দুআ এবং ফুয়ুযাতে ধন্যলাভ করে থাকে। মানে অসম্ভব ভক্তি-ভালোবাসা আলেম-উলামাদের প্রতি। সুতরাং ওই সকল আলেমগণ যে দিকে জাতিকে রাহবারী করেন সেদিকেই তারা পা বাড়ায়।

সাধারণ মানুষ কোনো দ্বীনী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে না। তারা সাধারণত মসজিদ এবং আলেম-উলামাদের সংস্পর্শে দ্বীনি জ্ঞান হাসিল করে থাকে। কেউ কেউ তো শুধু ওয়াজ মাহফিলের উপরে নির্ভর করে থাকে। কর্মব্যস্ততা বা কোনো ভাল পরিবেশ না পাওয়ায় দ্বীনি প্রতিষ্টানে যাওয়া সম্ভবপর নয় বিধায় ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে দ্বীনি জ্ঞান লাভ করে থাকে এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে সাজায়।

ওয়াজ মাহফিল হলো একটা দরস বা ক্লাসের মতো। ক্লাসে যেমন শিক্ষকগণ ছাত্রদের তালিম দিয়ে থাকেন। আর ছাত্রগণ উস্তাদের মাধ্যমে ইলম হাসিল করে নিজেকে যোগ্য করে তোলে। এখন যদি ক্লাসের শিক্ষক অযোগ্য হন, তিনি যদি ছাত্রদের যথাযথ তালিম না দিয়ে ভুল শিক্ষা দেন, তাহলে ছাত্ররা ওই ভুল বিষয়াদি শিক্ষাগ্রহণ করবে। তেমনি ওয়াজ মাহফিলের যদি বক্তা মূর্খ হয়, সে যদি স্রোতাদের ভুল মেসেজ দেন, তাহলে উপস্থিত স্রোতারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আর দিনে দিনে ওইসব স্রোতারা গোমরাহিতে ডুবতে থাকে।

এজন্য ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের উচিত ওয়াজ করার আগে লেখাপড়া করে ওয়াজ করতে যাওয়া। যে বিষয়ে তাদের জানা নেই, সে বিষয়গুলো উপস্থাপন না করা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোনো বিষয়ে ফতোয়া প্রদান না করা। আজকাল বহু মূর্খ ওয়ায়েজ বা বক্তারা ফতোয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। যে কারণে সমাজের মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছে। মানুষ দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান আহরণের পরিবর্তে গোমরাহীর দিকে ধাবিত হচ্ছে।

আবার আয়োজকগন যারা আছেন, তাদের হুঁশ ফেরার দরকার আছে। আজকাল তো যাকে তাকে মাহফিলে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। কোন হক্কানী-রব্বানী আলেমকে দাওয়াত না দিয়ে বক্তা খোঁজা হয় ইউটিউবে। কোনো মাদ্রাসার বুজুর্গ আলেম বা মুহাদ্দিসকে কেউ দাওয়াত করে না। সবাই ইউটিউবে তালাশ করে সুরকার আর জারিজুরি মারা মানুষকে।

আবার কিছু হাসি- তামাশা বা কৌতুকঅভিনেতাদের মতো মানুষকে ওয়াজের ষ্টেজে হাজির করা করা হয়। যাদের না আছে কোনো ইলম, না আছে কোরআন- হাদীসের সহী জ্ঞান। এমনকি অনেকে সহী শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াতও জানে না। এরকম ব্যক্তিরা হচ্ছে ওয়াজের মাহফিলের প্রধান অতিথি। ওইসব ইলমহীন বক্তারা মানুষকে গোমরাহ বানাচ্ছে।

এজন্য আসুন! মূর্খ তথা ইলমহীন বক্তাদের বয়কট করি। ওদের থেকে জাতিকে হেফাজত করি। আল্লাহ আমাদের উপরে রহম করুন। আমিন।

  • লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *