মূর্তি সরিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি : আইনমন্ত্রী

মূর্তি সরিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ● সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরিয়ে ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি সম্মান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার মতে, এটি কোনো মূর্তি নয়। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়নি। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ওয়ার্ল্ড নো টোব্যাকো ডে ২০১৭’ এর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য গত বছরের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত হয়। পরে এটিকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে সরানোর দাবি তুলে হেফাজত। এ দাবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও একমত পোষণ করেন। যদিও ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক বলেছেন, এটি থেমিস নয়, শাড়ি-ব্লাউজ পরা বাঙালি নারী। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত বৃহস্পতিবার বিকালে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে ভাস্কর্যটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন রাতেই সরানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট কিংবা মৌলবাদীদের উত্থান হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যতোটুকু আমি জেনেছি, প্রধান বিচারপতি এটি সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, আমি তাদেরকে শুধু এ কথাই বলবো, এই মূর্তিটি, আমরা যে থেমিস বলি, এটির আসল রুপ না। সেক্ষেত্রে এটি কোনো মূর্তিই ছিলো না বলে আমার মনে হয়। এবং এই মূর্তিটা সরিয়ে বরঞ্চ ইসলাম ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মকে সম্মান করা হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, এখানে আসল থেমিসকে বিকৃত করা হয়েছে। বিকৃতি থেকে সরে আসতে চাই। বিকৃতির সব সময় নিন্দা করি। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি। ভবিষ্যতে আসল থেমিসের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা সুপ্রিম কোর্টের মালিক, তারা বলতে পারবেন। আইন ভেঙে কেউ ‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান করলে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বদ্ধপরিকর। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে আইন আর নীতিমালা করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। আইন অমান্য করে পাবলিক প্লেসে কেউ ধূমপান করলে, তামাক গ্রহণ করলে আপনারা কেউ বাধা দিচ্ছেন না। আইন করেছি, কিন্তু বাধা দেওয়াটা আরও জরুরি, আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। বিড়ি সিগারেটের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজোত দ্রব্যেও কর বাড়ানোর কথা বলেন আইনমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে, কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন উপাচার্য। প্রাথমিক পর্যায় থেকে পরিবর্তন নিয়ে এলে কিছুটা হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

সংবাদের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় এ অনুষ্ঠানে পাঁচ ক্যাটাগরিতে ছয়জনকে ২০১৭ সালের ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ দেওয়া হয়। সেরা স্থানীয় পত্রিকা ক্যাটাগরিতে দৈনিক কীর্তনখোলার চিফ রিপোর্টার গোলাম মর্তুজা জুয়েল, সেরা অনলাইন-প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরির ইংরেজি বিভাগে ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার পরিমল পালমা; বাংলা বিভাগে যৌথভাবে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার হামিদ-উজ-জামান মামুন ও বাংলাট্রিবিউনের বিজনেস ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম, টিভি রিপোর্টে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সুশান্ত সিনহা, শিশু সাংবাদিক বিভাগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হ্যালো’র শিশু সাংবাদিক সাদিক ইভান এবার পুরস্কার পেয়েছে। দৈনিক সমকালের উপসম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে এন্টি টোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার কো-অরডিনেটর মো. শাহরিয়ার, আত্মার যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *