মেডিক্যালে প্রশ্ন ফাঁসচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : যখন দেশে একের পর এক ভুয়া ডাক্তার আবিষ্কার হচ্ছে, ধরা পড়ছে অবৈধ ওষুধ ব্যবসায়ি, কোনো শিক্ষা ছাড়াই যেখানে পরিচালনা করছে হাসপাাতাাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তখনই আবার ঘটেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সেকশন মেডিক্যালে প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা। দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস। এক শ্রেণির অভিভাবক যেকোনো উপায়ে সন্তানদের মেডিক্যাল কলেজে পড়াতে চান।
তাঁরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনে সন্তানদের হাতে তুলে দেন। সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে তাঁরা আরো অনেক অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন। এভাবে দেশজুড়ে ছড়াচ্ছে মানহীন চিকিৎসকের সংখ্যা। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর মানুষ ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যশিক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আর সে জন্য প্রশ্ন ফাঁস রোধ করাসহ এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিয়মগুলো কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিআইডির অনুসন্ধানে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের দেড় শতাধিক সদস্যকে শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়জন এরই মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসকারী এই চক্রের সঙ্গে প্রেসের কর্মী, তাঁদের আত্মীয়, মেডিক্যালের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এমবিবিএস পাস করা জেড এম এ সালেহীন শোভন প্রশ্ন ফাঁসের অন্যতম হোতা। এদিকে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের প্রধান জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মুন্নুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জসিমের খালাতো ভাই ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রেসের কর্মী আব্দুস সালাম, চিকিৎসক সালেহীন শোভনসহ পলাতক অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে র্যাবের হাতে জসিম ও শোভন গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে তাঁরা আবার একই অপরাধ করে আসছিলেন। ২০১৫ সালে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করে। অথচ এখন গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে ২০১৫ সালে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
আমরা মনে করি, শুধু অস্বীকার করা নয়, বরং সমস্যাকে স্বীকার করেই তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে।