যেভাবে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করবেন

যেভাবে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করবেন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কিডনির রোগ যেমন জটিল তেমনি এর চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি অকার্যকারিতায় শেষ অবধি ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

আমাদের দেশে এ দুটি চিকিৎসাই সাধারণের সামর্থ্য ও আয়ত্তের বাইরে। কিডনি কেবল শরীরের রক্ত শোধন বা বর্জ্য নিষ্কাশনই করে না; রক্তকণিকা তৈরি, হাড়ের সুস্থতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষাসহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে এসবকিছুর ওপরই প্রভাব পড়ে।

কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস-যা ছোটদেরও হতে পারে, পাথর, ক্যানসার ইত্যাদি, তার সঙ্গে নানা ওষুধ ও রাসায়নিকের বিষক্রিয়া। একটু সচেতন থাকলেই আমরা এসব থেকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে পারি।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল করে। পরিবারে যাদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে, তারা নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, বেশি থাকলে ওষুধ গ্রহণ করুন। পাতে লবণ একেবারেই নিষেধ। রক্তচাপ একটু বেশি থাকলে কিছু হয় না বা সমস্যা না হলে ওষুধ খাবার দরকার নেই-এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বয়স্করা অনেক সময় ওষুধ খেতে ভুলে যান, বা রক্তচাপ বাড়লেও বুঝতে পারেন না। তাদের দিকে বিশেষ নজর দিন।

বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি বিকল হওয়ার প্রধানতম কারণ। রক্তে শর্করা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিচে রাখতেই হবে। নিয়মিত রক্তের শর্করা মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা বছরে অন্তত এক বা দুবার কিডনি পরীক্ষা করাবেন। মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে। যে কোনো বয়সে যে কোন সময় হতে পারে।

স্থুলতার সঙ্গেও কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে। কিডনিতে পাথর, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের সঙ্গে স্থুলতা জড়িত। এ ছাড়া ওজন বাড়লে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ওজন কমান। এতে অন্যান্য রোগের মতো কিডনি রোগের ঝুঁকিও কমবে।

যখন-তখন ইচ্ছা হলেই দোকান থেকে কিনে ওষুধ খাবেন না। অনেক ওষুধ আছে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত হলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। বনাজি, হারবাল ওষুধ, অতিরিক্ত ভিটামিন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুদের যে কোনো ওষুধে খুবই সাবধানতা জরুরি। মাত্রার একটু এদিক-ওদিক হতে পারে বিরাট বিপত্তি। তাই সাবধান, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কখনো নয়।

ধূমপান কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যহত করে। এ ছাড়া কিডনি ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান একেবারেই বর্জন করুন। শিশুর ও নারীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। সবার সুরক্ষার জন্যই ধূমপান ছাড়াটা জরুরি।

পরিবারে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল খেতে হবে। লাল মাংস কম খান। পানি বেশি খেলে কিডনি ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই। তবে আবহাওয়া অনুযায়ী যথেষ্ট পানি পান করুন। শিশুরা স্কুলে ঠিকমতো পানি পান করে কি না খেয়াল করুন। প্রস্রাব আটকে রাখা খারাপ। প্রস্রাবে সংক্রমণ এড়াতে ব্যক্তিগত ও টয়লেটের পরিচ্ছনতার দিকে নজর দিন।

বয়স বাড়লে, বিশেষত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে, প্রতিবছর নিয়ম করে কিডনির সুস্থতা জানতে প্রস্রাবে আমিষ ও প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলে সতর্ক হোন। ছোটদেরও কিডনিতে প্রদাহ হয়। প্রস্রাব কম হওয়া, লাল হওয়া ও শরীরে পানি জমা এর লক্ষণ। এমন হলে চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না।

লেখক : মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *