২৭শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ডিমের দাম। কয়েকদিন আগেই ৩৬ টাকা হালির ডিম বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা এই দামবৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ সামনে এনেছেন।
তারা বলছেন- পোল্ট্রি খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস, তেলের দামের কারণে ভাড়া বৃদ্ধি এবং চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় হু হু করে ডিমের দাম বাড়ছে।
খুলনার কৈয়ার অন্যতম বড় মুরগীর খামার এ আর বি এগ্রিকালচারের সত্ত্বাধিকারী মো. বশির গাজী জানান, তার খামারে ৩৬ হাজার মুরগি ছিল। এখন আছে ১৪ হাজার। প্রতিদিনই ৬-৮টি মারা যায়। এ কারণে কিছু মুরগি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “এখন সাত হাজার মুরগি নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। তাতে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। দাম বাড়লেও চাহিদা রয়েছে বেশ। আর খাবারের দাম ও যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত উৎপাদন করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আগে গড়ে ডিমের হালি বিক্রি হতো ২৮ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়।”
এই ডিম ব্যবসায়ী আরও বলেন, “অথচ খাবারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ। আগে ১০০ কেজি খাবারের দাম পড়ত ২৮০০ টাকা। এখন সেই খাবারের দাম ৫২০০ টাকা।”
কৈয়ার ঘোলা এলাকার কামাল উদ্দিনের মুরগি খামারের পান্নু মিয়া বলেন, “১৫০০ মুরগি দিয়ে খামার শুরু করি। এখন ১১০০ মুরগি আছে। ৪০০ মুরগিই ইতোমধ্যে মারা গেছে। এখন ৪৮০টি নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। আগে ১ কেজি খাবারে খরচ পড়ত ২৮ টাকা, এখন লাগে ৫২ টাকা। আগে পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধের দাম ছিল ৪০০ টাকা, এখন তার দাম ৪৮০ টাকা। ভিটামিনের দাম ছিল ১২০০ টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৭০০ টাকায়। সব মিলিয়ে আগে গড়ে প্রতিটি ডিম সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ১১ টাকার নিচে নামা সম্ভব না।”
রূপসা বাজারের ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে আমাদের পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই দাম বাড়াতে হয়েছে।”
খুচরা বিক্রেতা মো. ফয়সাল হোসেন বলেন, “ডিমের দাম ওঠা-নামা করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সম্প্রতি ডিমের হালি ৫২-৫৫ টাকা হয়েছে। এটা আসলেই অস্বাভাবিক। পরিবহন ভাড়া ও মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। সে কারণে ডিমের দামও বেড়েছে।”
মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ পড়েছে বেশি সমস্যায়। তেলের দাম বাড়ার কারণে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
পোল্ট্রি খাদ্যের ব্যবসায়ী মো. মামুনুর রহমান বলেন, “খাবারের দাম বেড়েছে ২০১৯ সালের শেষে। তারপর আর দাম বাড়েনি। আমরা অনেক আগে থেকেই রেডিমিক্স ৫০ কেজি বস্তার দাম ১৩০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা করেছি। এখন দাম বেড়েছে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকার কারণে।”
এ বিষয়ে পোল্ট্রি ফিড দোকান মালিক সমিতি খুলনার সাধারণ সম্পাদক এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, “রেডিমিক্স দানাদার খাবারের দাম অনেক আগেই ৫০ কেজি বস্তার দাম ৪৬০০ টাকা থেকে ৫৪০০ টাকা করা হয়েছে। এ দাম অনেক আগেই বেড়েছে। আর ডিমের দাম বেড়ে গত এক সপ্তাহে। এটা তেলের দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকার কারণে হয়েছে।”
সুত্র : ঢাকা ট্রিবিউন