যৌতুককে না বলি
মেয়েটির নাম জেসমিন আক্তার। যথেষ্ট পর্দানশীন মেয়ে একটা। খুবই সাদাসিধে। দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। সে ইন্টার পাশ করে বিয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। লেখাপড়া এই পর্যন্তই অফ। গরীব বাবার পক্ষে তাকে আর লেখাপড়া করানো সম্ভব না।
একের পর এক পাত্র তাকে দেখেই যাচ্ছে কিন্তু তার বিয়ে আর হচ্ছে না! কাঙ্ক্ষিত পাত্রটি আসছে না।এ যাবত তাকে কমপক্ষে আট দশটা ছেলে দেখেছে। কিন্তু জেসমিনের সমস্যা টা কি? যে তার বিয়ে হচ্ছে না! তার চেহারাও দেখতে খারাপ না কিন্তু।
তার বিয়ে না হওয়ার কারণ একটায়, সে গরীব। তার বাবা রিকশা চালায়। এমন মেয়েকে কেউ বিবাহ করতে চায় না।
এই তো কিছুদিন আগে এক পাত্রপক্ষ দেখতে এল, দেখে ঠিকই পছন্দ হলো, কিন্তু পরক্ষণে যে কথা বলল, তাতে এখানেও তাঁর বাবার পক্ষে তাকে বিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হলো না। কারণ পাত্রপক্ষরা যৌতুক বা ভিক্ষা চায়। তাদের দু লক্ষ টাকা দিলে তারা মেয়েকে বিবাহ করবে।
রিকশাচালক বাবার পক্ষে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। যদিও সে অনেক কস্ট করে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি। কিন্তু পাত্রপক্ষরা দু লক্ষের একটা কম দিলেও তারা মেয়েকে বিবাহ করবে না।
মেয়েটি এখন হতাশ। সে এখন পণ করেছে, যতদিন সে, যৌতুক নিবে না এমন পাত্র না পাবে ততদিন সে বিয়েই করবে না। প্রয়োজনে সে চিরকুমারী থেকে যেতে চায়।
আজ শুধু জেসমিন এমন অবস্থায় রয়েছে তা কিন্তু নয়! এমন কত জেসমিন আমাদের সমাজে রয়েছে তার কোনো হিসাব আমাদের জানা নাই। আমার জানামতে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় মেয়েকে দুই, তিন লক্ষ টাকা ছাড়া মেয়েকে বিবাহ দিতে পারে না মেয়ের পিতা। হাজারো কষ্ট করে মেয়ের পিতা টাকাগুলো জমা করে জামাইকে দিতে হয় বাধ্য হয়ে।
প্রিয় ভাই!
আমরা কি কখনো ভেবে দেখছি যৌতুক দাবি করাটা কি?
যৌতুক না হলে বিয়ে করবো না এ জাতীয় কথাবার্তাগুলি আমরা বলি। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন, ِতোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। [সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৮]
যৌতুকগ্রহণ করা অন্যায়ভাবে অর্থ গ্রাস করার শামিল। সুতরাং তা হারাম।
আজ আমাদের যেটা পালন করার কথা সেটা আমরা পালন করছি না। আমাদের জন্য যৌতুক দাবি করাটা হারাম কিন্তু আমরা তার দাবি করছি। মোহরানা আদায় করাটা আমাদের জন্য আবশ্যক কিন্তু সেটাকে আমরা ঠিকমত আদায় করি না।
ইসলামী শরীয়তে যৌতুকের আদৌ কোন স্থান নেই,অথচ ইসলামে বিবাহ বন্ধনে মোহরানার গুরুত্ব অত্যধিক। মোহর প্রদান স্বামীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব এবং স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।
মোহরানা প্রদান বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের দেনমোহর খুশী মনে প্রদান করবে। [সূরা নিসা : আয়াত ৪]
তবে আরেকটা বিষয় আমাদের সমাজে খুবই দেখা যায় তা হলো ছেলেদের প্রতি মোহরানা বৃদ্ধির জন্য চাপাচাপি করা হয়। যেটা খুবই খারাপ একটা বিষয়। ছেলের সাধ্য আছে ৫০ হাজার টাকা মোহরানা আদায় করার সেখানে তাকে বাধ্য করা হয় এক লক্ষ দু লক্ষ মোহরানা
করতে কিংবা এর থেকেও বেশি।
তাই আসুন! নবির সুন্নাহ মেনে বিবাহ করি। যৌতুক নামক ভিক্ষাকে পরিহার করি।
আমীন। ইয়া রব।
মুহা: আব্দুল্লাহ আল আফিক, ঝিনাইদহ থেকে