পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মাহে রমজান বছরের বাকি মাসগুলো থেকে আলাদা। এবারও গ্রীষ্মকালে রোজা শুরু হবে। তাই প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এই রোজার সময়ে সুস্থ থাকতে খাবার গ্রহণে সচেতন থাকতে হবে। শরীরে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি—এই ছয়টি উপাদান দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখুন। পবিত্র রমজানে ইফতার, রাতের খাবার ও সাহ্রিতে কী খাবেন জেনে নিন।
- স্বাস্থ্যকর ইফতারি
ইফতারে খাবেন সহজপাচ্য ও কম তেল–মসলাযুক্ত খাবার। কারণ, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে গুরুপাক ও ভারী খাবার খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। হতে পারে শারীরিক জটিলতা। তাই একটি খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এরপর বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করুন অল্প অল্প করে। পানি একবারে গ্রহণ না করে বারে বারে পান করুন। ডাবের পানি, লেবুপানি, মৌসুমি ফলের জুস খেতে পারেন। এসব পানীয়র সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন তোকমাদানা, চিয়া সিড, ইসবগুলের ভুসি, ফ্ল্যাক্স সিড ইত্যাদি। ভাজাভুজি এড়িয়ে যান। অনেকে ইফতারে ছোলা ভুনা খেতে ভালোবাসেন।
তবে এই গরমে ভুনা ছোলার পরিবর্তে অঙ্কুরিত ছোলার সঙ্গে শসা, টমেটো, লেবু ও দু-তিন কোষ কাঁচা রসুন কুচি করে মিশিয়ে খেতে পারেন। দুই–তিন রকম ডালের সঙ্গে মুরগির মাংস মিশিয়ে কম মসলা দিয়ে হালিম তৈরি করে খেতে পারেন। টক দই দিয়ে লাল চিড়া, ওটস, বার্লি খেতে পারেন। এ ছাড়া টক দই, লাল চিড়া, যেকোনো মৌসুমি ফল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খেলেও উপকার পাবেন।
বিভিন্ন মৌসুমি সবজির সঙ্গে মুরগির মাংস মিশিয়ে স্যুপ তৈরি করেও খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে ফল, সাগুদানা ও সুজি দিয়ে ফালুদা বানিয়ে নিতে পারেন এক দিনের ইফতারে। দুধ ও ডিম দিয়ে পুডিং তৈরি করেও খেতে পারেন। আবার কেউ চাইলে ইফতারে রাখতে পারেন রুটি অথবা ভাত, ডাল, সবজি, শাক, মাছ বা মাংস অথবা ডিম ইত্যাদি।
- রোজার দিনে রাতের খাবার
অনেকেই সন্ধ্যারাতে খাবার না খেয়ে সরাসরি সাহ্রিতে খাবার খান। এই অভ্যাস একেবারে ঠিক না। অন্যান্য সময়ের সকালের নাশতার পরিমাণ খাদ্য সন্ধ্যারাতে খেতে হবে। সহজেই হজম হয় এমন খাবার খেতে চেষ্টা করুন। রাতের খাবারের মেন্যু হিসেবে থাকতে পারে লাল আটার রুটি অথবা অল্প ভাত, ডাল, সবজি, শাক, মাছ বা মাংস অথবা ডিম ইত্যাদি।
প্রতি রাতে তো একই খাবার ভালো লাগবে না, তাই কোনো কোনো দিন ভিন্নতা আনতে সবজি ও মুরগি দিয়ে স্যুপ করে খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে সামান্য ওটস, লাল চিড়া, বার্লি ও খেজুর ব্লেন্ড করে স্মুদি বানিয়ে রাতের খাবার টেবিল সাজাতে পারেন। যে খাবারই খান, শেষ পাতে একটু টক দই খেতে পারলে ভালো। এই অভ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।
- সাহ্রিতে ভরপেট
সাহ্রিতে খাবার হবে অন্যান্য সময়ের দুপুরের খাবারের পরিমাণ। দীর্ঘ সময় পেটে থাকে ও আস্তে আস্তে হজম হয়, এমন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সাহ্রির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। মোটেও তা না। কারণ, চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাবার পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো। বেশি বেশি খেলে বরং ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।
সাহ্রিতে খেতে পারেন লাল আটার রুটি বা লাল চালের ভাত। এটা যাঁর যাঁর অভ্যাসমতো। সঙ্গে এক বাটি ডাল, এক কাপ সবজি, মাছ বা মাংস অথবা ডিমের যেকোনো একটি পদ (দুই পদও খেতে পারেন)। মোট পরিমাণটা যদি আরও সঠিকভাবে বুঝতে চান তাহলে একটি আদর্শ প্লেট নিয়ে তাকে চার ভাগে ভাগ করে নিন।
এবার সেটার দুই ভাগে থাকবে মিশ্র সবজি বাকি দুই ভাগের এক ভাগে ভাত বা রুটি আর এক ভাগে প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। সাহ্রির সময় এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ রাখা উচিত। কেউ চাইলে দুধ দিয়ে লাল চিড়া বা ওটসও খেতে পারেন।