৩০শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

রাখাইনের পরিবেশে অসন্তুষ্ট প্রতিনিধি দল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রথম দফা প্রত্যাবাসনের আগে মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আরআরআরসির ৭ সদস্যসহ মোট ২৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল ফিরে এসেছে।

শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টার দিকে টেকনাফ জেটিঘাট দিয়ে ২৭ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি নৌ পথে স্পিডবোট যোগে রওনা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফিরে আসেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় ,বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা ২০ জন রোহিঙ্গা সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আরও ৭ কর্মকর্তাসহ মোট ২৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য মংডুর টাউনশিপ (আই ডি পি) ক্যাম্পে যান। এছাড়া প্রতিনিধি দল সেখানে ১৫টি গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

১৫ মার্চ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের ১৭ সদস্যর একটি টেকনিক্যাল টিম যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল তাদের মধ্যে থেকে রোহিঙ্গা টেকনাফের লেদা ২৪ নম্বর থেকে ২ জন, শালবাগান ২৬ নম্বর ক্যাম্প থেকে ৪জন ও জাদিমুড়া ২৭ নম্বর ক্যাম্প থেকে ১৪জনসহ মোট রোহিঙ্গা ২০ জন।

উল্লেখ্য, মানবিক কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।একাধিকবার তালিকা তৈরি করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সরকার রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর করার পর রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় এর আগে ছিল আরো ৪লাখ।এঘটনার পর আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি। তবে, ২০১৯ সালে দু’দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

নতুন করে আবারও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা তথ্য যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যর টেকনিক্যাল টিম গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশে আসার পর ৭দিনে প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন।সাক্ষাৎকার নেওয়া ওই তালিকা থেকে ২০ রোহিঙ্গা মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য পরিস্থিত দেখতে মংডুতে অবস্থান করবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধির কাছে আমরা প্রস্তাব রেখে ছিলাম যারা প্রত্যাবাসিত হবে এবং প্রত্যাবাসন পরবর্তী তাদের অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো যাতে রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে দেখানো হয়। তারা আমাদের সে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

শুক্রবার সকালে আমরা ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা একটি দল নিয়ে মিয়ানমার মংডু টাউনশিপে যাওয়ার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা ঘরগুলো আমাদেরকে তারা ঘুরে ফিরে দেখিয়েছে, সাথে থাকা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাও দেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, মুলত এগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা আয়োজক। যারা প্রত্যাবাসিত হবে তাদেরকে যেনো এগুলো দেখানো হয়। মিয়ানমার প্রতিনিধি তাদের ব্রিফিং করেছে। তারা কী দেখেছে তারাই বলতে পারবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে।

ফিরে আসা রোহিঙ্গা মো. সেলিম বলেন, আমরা মিয়ানমারের পৌছার পর তাদের তৈরি করা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কাদের জন্য, তারা উত্তরে বলে আমাদের জন্য। তখন আমরা তাদের বললাম, এ ক্যাম্পে থাকবো না, কারণ আমরা এ দেশের নাগরিক নিজের বাড়িঘরে ফেরত যাবো।

তারা তাদের আরও বলেন আমরাসহ মিয়ানমারের ৩৬ জাতি আছে, ৩৫ জাতি যদি নাগরিক সুবিধা পায়, আমরা কেনো পাব না? এবং আমরা যদি আমাদের ন্যায্য অধিকার নাগরিকত্বসহ এম্বেসি কার্ড না পাই তাহলে আমরা মিয়ানমার ফিরে যাব না।

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com