রাজধানীতে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত

রাজধানীতে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পৌষের শেষে এসে সারা দেশের মতো রাজধানীতেও জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। প্রতিদিন হ্রাস পাচ্ছে তাপমাত্রা। রাজধানীতে এক দিনেই তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের সকাল ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল মানুষ। আবহাওয়াবিদগণ জানান, পৌষের শেষে যেমন শীত অনুভূত হচ্ছে, মাঘের শুরুতেও তা থাকতে পারে। তবে এ সময় রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশাও থাকবে সপ্তাহ জুড়ে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি দেশব্যাপী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, আজ-কাল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই, তাই আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। রাতের তাপমাত্রা এখন যেমন আছে তার থেকে একটু বাড়বে। তবে দিনের তাপমাত্রার অবস্থা একই থাকবে। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

চলতি জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এ মাসে দেশে এক থেকে দুটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছী ও চুয়াডাঙ্গায়। আর ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি। বড় এলাকা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক দিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মঙ্গলবার ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাটগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানচলাচল করতে দেখা গেছে। আজ সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। কুয়াশার কারণে সূর্যের আলোর তীব্রতা চরাচরে না পড়ায় শীতের কনকনে অনুভূতি বাড়ছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষক হামিদুল হক বলেন, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেন, দেশব্যাপী চলমান কুয়াশার বিস্তার থাকবে সপ্তাহ জুড়ে। শনিবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব দিকের বিভাগগুলোর ওপরে কুয়াশা বৃদ্ধি পেতে থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের বিভাগগুলোর ওপরে কুয়াশা কমতে থাকবে। সপ্তাহের শেষের দিকে আবারও রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো জেলার ওপরে সকাল ৬টার সময় তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পরেই পুরোদেশে ভারী কুয়াশার বিস্তার লাভ করবে। এজন্য ১৫ জানুয়ারির পর আলুচাষিদের কৃত্রিম সেচ না দেওয়া উত্তম। এতে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। তিনি জানান, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত রয়েছে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যালোক দেখতে না পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নৌযান চলাচল প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের সব বড় নদনদীতে ভারী কুয়াশার আস্তর থাকবে। রাতে দূরপাল্লার বাস-ট্রাকসহ সব পরিবহন চলাচলে গতিসীমা সীমিত করতে হবে। দেশের সব বড় বড় নদনদীর নৌপথের দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *