রাফায় ৬৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, দুই জিম্মিকে মুক্ত করল ইসরায়েল

রাফায় ৬৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, দুই জিম্মিকে মুক্ত করল ইসরায়েল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনের রাফাহতে হামলা চালিয়ে ৬৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এদিন দুই ইসরায়েলি-আর্জেন্টাইন জিম্মিকে মুক্ত করার কথাও জানিয়েছে তেল আবিব।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর।

কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ গাজায় ৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও বহু হতাহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লাখ লাখ ফিলিস্তিনি ওই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, অভ্যন্তরীণ শিন বেট নিরাপত্তা পরিষেবা ও বিশেষ পুলিশ ইউনিটের যৌথ অভিযান ফার্নান্দো সাইমন মারমান (৬০) ও লুই হেয়ার (৭০) নামে দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর জিম্মি হওয়া ২৫০ জনের মধ্যে ছিলেন তারা।

চার মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসজজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ২৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহত অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩১ জন মারা গেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “দুইজনকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার যে, রাফাহতে স্থল হামলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক শঙ্কা রয়েছে তাকে দূরে রাখতে হবে।”

ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, “ফার্নান্দো ও লুই, আপনাদের বাড়িতে স্বাগত জানাই। সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র অব্যাহত সামরিক চাপই আমাদের সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি এনে দেবে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সারারাত হামলায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান। ফলে সংখ্যা বাড়তে পারে।

রয়টার্সের একজন সাংবাদিক ধ্বংসস্তূপের বিস্তীর্ণ এলাকা দেখেছেন। যেখানে একটি মসজিদসহ ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইব্রাহিম হাসসুনা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আমার পরিবারকে মেরে ফেলেছে তারা। সকাল থেকে আমার পরিবারের মৃতের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করছি। কোনটা কার শরীরের অংশ বুঝতে পারছি না। কেবল তাদের হাত-পায়ের আঙুল চিনতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা উত্তর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছি, আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের বোমা মেরেছেন কেন? দয়া করে সুবিচার করুন।”

রাফাহ শহরের বাসিন্দারা বলছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক ও জাহাজ এক ঘন্টারও বেশি সময়ের মধ্যে দুটি মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন আঘাত হেনেছে। ফলে গাজাবাসী ঘুম থেকে জেগে উঠেছে হতচকিয়ে। তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।”

গাজার ব্যবসায়ী এমাদ রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের তাঁবু ক্যাম্প থেকে ২০০ মিটার দূরে গোলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। মৃত্যু এত কাছে ছিল, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, যে বেঁচে আছি।”

তিনি বলেন, “গত মাসে রাফাহ শহরে আসার পর থেকে এটি ছিল বোমা হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ রাত।”

কেউ কেউ শঙ্কা করেছিলেন, ইসরায়েল শহরে একটি দীর্ঘ স্থল আক্রমণ শুরু করেছে। কারণ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি মানুষ ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

এমাদ বলেন, “সবাই বলেছিল এটা একটা আশ্চর্যজনক স্থল অভিযান। আমার পরিবার ও আমি আমাদের শেষ প্রার্থনা বলেছিলাম। ভেবেছি এটাই হয়তো পৃথিবীতে শেষ দিন।”

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, “অভিযানের সময় বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় জিম্মিদের রাখা হয়েছিল। ওই সময় আশেপাশের ভবন থেকে গুলি বিনিময় করা হয়েছে।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচ্ট বলেন, “আমরা এই অভিযানে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। আমরা সঠিক অবস্থার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

আর্জেন্টিনার সরকার দুই ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য ইসরায়েলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। উদ্ধার হওয়া দুইজন আর্জেন্টিনার দ্বৈত নাগরিক বলে জানিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *