পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে তা খারিজ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও তার স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার ইমরান এ. সিদ্দিক। তাহেরের পরিবারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আপিল করেন। আপিলের ওপর ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুজন হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেছিলেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এসবের ওপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। অষ্টম দিনে গত ১৬ মার্চ শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
রায়ের পর অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, “বাবাকে হারিয়েছি ১৬ বছর হলো। দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর হলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবো।”