রাশিয়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?

রাশিয়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরুর পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে আয় কমাতে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বাস্তবে কতটা কার্যকর করা সম্ভব, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।

সোমবার থেকে জি৭ গোষ্ঠী সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ওপর ‘প্রাইস ক্যাপ’ চাপানো সত্ত্বেও রাশিয়া এমন পদক্ষেপ গ্রাহ্য করবে না বলে জানিয়েছে। এমনকি প্রয়োজনে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন কমাতেও প্রস্তুত মস্কো। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করায় রাশিয়ার রাজস্ব কমতে বাধ্য।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তেল এত দিন ইইউতেই রপ্তানি করা হতো।

জি৭ গোষ্ঠী, ইইউ ও অস্ট্রেলিয়ার চাপানো এই ‘প্রাইস ক্যাপ’ নিয়ে এমন পদক্ষেপের প্রবক্তাদের মধ্যেও অন্য বিতর্ক দানা বাঁধছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির মতে, ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের ঊর্ধ্বসীমা একেবারেই গুরুত্বহীন এবং এর ফলে রাশিয়া মোটেই যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো চাপ অনুভব করবে না।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া সমস্যায় পড়লে ক্ষোভ দেখিয়ে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন কমিয়ে দিলেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা আরো বিপন্ন হবে বলে রাশিয়া আগেই সতর্ক করে দিয়েছে। শাস্তি এড়াতে দেশটি গোপনে কিছু তেল বিক্রির চেষ্টাও করতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

জি৭ গোষ্ঠী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নথিভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। বীমা কম্পানি ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ছে। রাশিয়া থেকে অন্য কোনো দেশে তেল সরবরাহের সময় ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের কম মূল্য স্থির করা হলে তবেই এসব প্রতিষ্ঠান এমন পরিবহন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে।

গোটা বিশ্বের জলপথে জি৭ ও ইইউ দেশগুলোর ট্যাংকারের আধিপত্য থাকায় এমন পদক্ষেপ অন্তত আংশিকভাবে সফল হবে বলে ‘প্রাইস ক্যাপ’-এর প্রবক্তরা আশা করছেন। তবে শাস্তি এড়াতে রাশিয়া যতটা সম্ভব অন্যান্য দেশের জাহাজ ব্যবহার করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

এদিকে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার ওপর আরো চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি কূটনৈতিক উদ্যোগের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহান্তে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার মূল্য হিসেবে রাশিয়ার নিরাপত্তার নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ইউক্রেন ও বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলইয়াক বলেছেন, রাশিয়ার কাছ থেকেই বরং বিশ্বের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার প্রয়োজন রয়েছে। ইউক্রেন উল্টো ইইউর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে পুতিনের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ আদালত গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগ কতটা সফল হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

রাশিয়ার ক্রমাগত হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনের বিদ্যুৎ পরিষেবা এখনো মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন ও পরিষেবা কম্পানিগুলো নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে সরবরাহ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহর ও অঞ্চলে ব্ল্যাকআউটের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা চলছে। শীতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে থাকায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়ছে। দেশের দক্ষিণে খেরসন ও অন্যান্য কিছু এলাকায় রুশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

  • সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *