পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অনেক মানুষ আছেন, রাস্তায় প্রায় সময় হারিয়ে যান। পরিচিত চেনা জানা রাস্তাও তাদের মনে থাকে না। আপনি কি এমন? প্রায়ই রাস্তা হারিয়ে ফেলেন? কোন রাস্তা চেনার নির্দেশনা অনুযায়ী ধরুন পয়েন্ট এ থেকে বি তে না গিয়ে, আপনি কি পি কিউ কিংবা আর এ গিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে পড়েন? কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কিংবা পথ হারানো নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা-আলাপ বা কৌতুকের সময় সবাই কি আপনাকেই ইঙ্গিত করতে থাকে?
যদি এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন লাভডের সাহায্য দরকার আপনার। তিনি বলছেন, দিক নির্দেশনা মনে রাখার জন্য আপনাকে কিছু সাধারণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেগুলো চর্চা করতে হবে। এই চর্চা করলে আর পথ হারানোর সম্ভবনা নেই।
১. নিজের যাত্রাপথ পরিকল্পনা করবেন
আপনার হাতে যদি ম্যাপ বা মানচিত্র থাকে, তাহলে সেটি দেখে নিজের যাত্রাপথটি সহজেই আপনি কল্পনা করে নিতে পারেন। যাত্রা পথে শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করে সময় নষ্ট করবেন না, যেখান থেকে যাত্রা শুরু করবেন, সেখান থেকে গন্তব্যস্থল পর্যন্ত প্রতিটি মোড় এবং বাঁক পর্যন্ত পথে লক্ষণীয় বা বিশেষ কি কি স্থাপনা আছে, সেটি খেয়াল করুন। পথ হারালে তখন এই লক্ষণীয় স্থাপনাগুলোই আপনাকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করবে।
২. রিল্যাক্স থাকবেন সবসময়
পথ হারাচ্ছেন বলে বা রাস্তা মনে রাখতে পারছেন না বলে অস্থির হবে না কখনো। রিল্যাক্স থাকবেন সবসময়। দুশ্চিন্তা মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এবং দিক নির্দেশনার স্বাভাবিক গতি নষ্ট করে। তাই কখনো দুশচিন্তা করবেন না। কোথাও যাবার আগে আপনি যদি আগে থেকে পরিকল্পনা করতে পারেন, তাহলে আপনার আগাম দুশ্চিন্তা সহজেই লাঘব হতে পারে।
৩. মনোনিবেশ করুন সবসময়
কাজ করতে করতে অন্যমনস্কভাবে পথ চলবে না। কথা বলতে বলতে রাস্তায় হাটা কিংবা মোবাইলে টেক্সট মেসেজ লিখতে লিখতে কেউ হাঁটলে কিংবা কিছু ভাবতে ভাবতে কেউ যখন পথ চল, স্বাভাবিকভাবেই যাত্রাপথে তার নজর থাকে না। ফলে পথ হারানো খুবই স্বাভাবিক। তাই স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজন্য নতুন রাস্তায় যাবার সময় মন দিয়ে চারপাশের জিনিসপত্র খেয়াল করা দরকার।
৪. উল্লেখযোগ্য স্থাপনা খুঁজার চেষ্টা করবেন
খুব পরিচিত অথবা একেবারেই উদ্ভট কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করুন, যাতে অন্য কিছু দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা চিনতে পারবেন না, তখন সেটির কথা মনে পড়লে, বাকিটা চিনে নিতে পারবেন। প্রতিটি বাঁকে এসে মনে মনে মিলিয়ে দেখবেন যখন, আপনাআপনি মাথার মধ্যে একটা ম্যাপ তৈরি হয়ে যাবে। আবার আসলে এ জায়গা চিনবো তো?
৫. পথের দিকে খেয়াল রাখবেন
মানুষ সাধারণত সামনের দিকেই নজর রাখে, কিন্তু যারা পেছনে তাকান এবং কোন পথে এলেন পথে কি কি ফেলে আসলেন—একটু ফিরে এসব দেখে নেন, তারা রাস্তা চেনার ক্ষেত্রে ভালো করেন। এটা বিশেষ করে ফেরার পথে আপনার কাজে লাগবে বলে আমরা ধারণা করছি।
৬. নির্দিষ্ট স্থানের সঙ্গে স্মৃতির যোগ করবেন
নির্দিষ্ট কোন জায়গার সঙ্গে যদি আপনার কোন বিশেষ স্মৃতি থাকে, তাহলে সেই জায়গার কথা মনে রাখা সহজ হবে। বিশেষ করে ফেরার পথে সেটা আপনাকে সাহায্য করবে। হয়ত প্রথম যখন ঐ জায়গায় গিয়েছিলেন সেখানে আপনারা কথা বলছিলেন, কিংবা কেউ হয়ত গেয়ে উঠেছিল কোন গান। এসব ঐ জায়গা সম্পর্কে মস্তিষ্কে কিছু স্মৃতি জমিয়ে রাখে, একই পথে ফিরলে যে স্মৃতি আপনাকে পথ চিনিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৭. ছবি তুলে রাখবেন
কোন জায়গায় যদি আপনাকে বারবার যেতে হয়, তাহলে মূল জায়গাগুলোতে ছবি তুলুন এবং পরে সেই ছবিগুলো খেয়াল করুন। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কিছু অনুশীলন প্রয়োজন
বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, কোন স্থান চেনাতে ছবি এমনকি ভিডিওর চাইতেও বেশি কাজ করে।
৮. যাত্রাপথটি মনে রাখবেন
নিজের যাত্রাপথটি মনের মধ্যে গেঁথে নেবার চেষ্টা করবেন। বারবার দৃষ্টিগোচর করার চেষ্টা করুন পুরো পথটি। এটি করার ফলে আপনার মস্তিষ্কের স্নায়ু শক্তিশালী হবে এবং আপনার স্মৃতি স্থায়ী হবে। এসব কিছু করার পরেও যদি দেখেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, তাহলে স্মার্টফোনে স্ট্রিটভিউ বা গুগলম্যাপসের মত অ্যাপস তো রয়েছেই। স্মার্টফোনে বেশি বেশি জিপিএস ব্যবহার করার মানে হলো, নিজের স্বাভাবিক দিক নির্দেশনার ইন্দ্রিয় আপনি কম ব্যবহার করছেন। ফলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা মস্তিষ্কের কিছু মানবিক অনুশীলনকে উৎসাহিত করেন।