পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোববার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে ভোট দেবেন নাগরিকেরা। বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে তুলে এনেছে শেখ হাসিনার সরকার। তবে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রক্তক্ষয়ী নির্বাচনী প্রচারের পরও শেখ হাসিনার (৭১) প্রধানমন্ত্রী থাকার পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে। বিরোধীরা চলমান পরিস্থিতিকে দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর’ বলে উল্লেখ করেছে।
নির্বাচনের কয়েক মাসে শেখ হাসিনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ বিরোধীপক্ষের অসংখ্য নেতাকর্মী কারারুদ্ধ অথবা নিখোঁজ আছেন। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ও স্বাধীন গণমাধ্যমের সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাজে বাংলাদেশে যাওয়ার ভিসা দিতে অহেতুক দেরি করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন (৮২) বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষের কর্মীদের ওপর পুলিশের হয়রানি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁদের জোটের ৭০ জনের বেশি প্রার্থীর মিছিল ও দলীয় কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। তাঁরা এখন নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে ভয় পাচ্ছেন। এ মাসের শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে ফেরার পথে তাঁর নিজের গাড়িবহরেও হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার প্রথম দিনই সহিংসতায় আওয়ামী লীগের দুই সদস্য নিহত হন। শেখ হাসিনা আশা করছেন, ১০ কোটি ভোটার সহিংসতাকে ঘৃণা করে দেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নতি তথা ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়া এবং গত এক দশক ধরে ৬ শতাংশের বেশি বার্ষিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেবেন। এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্ট খাত থেকে- যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
ইতিবাচক হিসাবনিকাশ দেখালেও এ বছরেই রাজধানী ঢাকা দুইবার অচল করে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা, যা কয়েকজন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে ব্যাপক অস্থিরতাকে তুলে ধরে। ভোটাররা যদি রোববারের নির্বাচনে বাধাহীন ভোট দিতে পারেন, তবে এর প্রতিফলন ব্যালট বাক্সে দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক শাহাব এনাম খান বলেন, বিশ্বের অতি ধনী ব্যক্তিদের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এর অর্থ এই নয় যে, নিম্ন আয়ের মানুষেরাও এতে উপকৃত হচ্ছেন। শাহাবের মতে, গত আগস্ট মাসে নিরাপদ গাড়ি চালনার দাবিতে আন্দোলনের বিষয়টি ভোটারদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। জননিরাপত্তার নামে আইনের প্রয়োগ ও বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার বিষয়টিও ভোটে নির্ধারক হয়ে উঠবে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, শত শত মানুষকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে বা গোপন জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসার অভিযোগে ৪৫০ জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।নির্বাচনের আগে ভুয়া প্রচার ঠেকানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েকবার ইন্টারনেট সেবা সীমিত করেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবার গতি কমানো হয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশ না করে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেছেন, টেলিকম অপারেটরদের বৃহস্পতিবার রাতে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়। ভুয়া প্রচার রোধ ও ইন্টারনেটে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশ্য ১০ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক করা হয়।
রক্ষণশীল বিএনপি যতটা দুর্বল হয়েছে, বাংলাদেশে কতৃত্ববাদী শাসন ততটা দৃঢ় হয়েছে। ২০১৪ সালে কারচুপির আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি জানায় বিএনপি। ফলে বিদায়ী সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন লন্ডনে থাকছেন। বিএনপি দুর্বল হলেও সরকার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেনি। নির্বাচনে আগে এই দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন লাখ মামলা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ফেসবুক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছে, ১৫টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এ পেজগুলো বন্ধ করা হয়। সেগুলোতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল। অন্য জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার জানিয়েছে বাংলাদেশে ১৫টি এমন অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে যে অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে। এক বিবৃতিতে টুইটার জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে জানা গেছে, সরকারের মদদে এই কাজ করা হচ্ছে।