রোজার আগে খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা

রোজার আগে খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ডলার সংকটে আমদানি কমাসহ নানান অজুহাতে রমজানকে সামনে রেখে হু হু করে বাড়ছে খেজুরের দাম। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রমজানে খেজুরের চাহিদা তুঙ্গে থাকে বলে প্রতিবছরই এই সময় পণ্যটির দাম বাড়ে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের রমজানে চট্টগ্রামের ফলমন্ডির পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের ‘মরিয়ম খেজুর’ বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার টাকায়। এবার তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজারে। খুচরায় কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের সংকটে আমদানিতে সৃষ্ট জটিলতা, তেলের দাম বাড়ায় জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে- এসব কারণে আমদানি করা খেজুরের দাম বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর আমদানি হয়েছে। যেসব খেজুর আমদানি করা হয়েছে সেগুলো খালাসের আগে আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। নষ্ট, পচা খেজুর এবার আমদানি করা হয়নি।’

নাছির উদ্দিন বলেন, ‘চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৩ টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯১ হাজার ৯০৪ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬২ হাজার ২৭৪ টন খেজুর আমদানি করা হয়।’

চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ শফিউল আজম টিপু বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার মান ভেদে খেজুরের দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ডলার সংকট, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খেজুরের দাম বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর এবার আমদানি হয়েছে। সংকট হবে না।’

চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমন্ডিতে অবস্থিত ‘অ্যারাবিয়ান ডেটস সুপার শপের’ মালিক শফিউল আলম বলেন, ‘দেশে অন্তত ২০ থেকে ৩০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। বর্তমানে প্রতি কেজি জাহিদি খেজুর ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও গত বছর এর দাম ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আজওয়া খেজুর এবার বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। গত বছর এর দাম ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। মাবরুক খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত বছর ছিল ৬৫০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি পাঁচ কেজি প্যাকে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং ১০ কেজি প্যাকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশিতে আমরা খেজুর বিক্রি করে থাকি। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি মান ভেদে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘খেজুরের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেছি। এতে দেখেছি, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম কিছুটা বেশি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, তাদের কেনা বেশি পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছে- আমদানিকারকদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে খেজুর কিনেছে। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করা হয়নি। খেজুরের দাম কেন বাড়ছে তা আমরা তদারকি করছি।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ডলার সংকটে খেজুরের দাম বেড়েছে বলাটাও একটা অজুহাত। বিগত বছরে যে পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হয়েছিল তা আরও দুই বছর চলবে। যা এখনও মজুত আছে। তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্য ডলার সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সেই সুযোগে খেজুর আমদানিকারকরাও এ অজুহাত দিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। তারা যে সংকটের কথা বলে, বাস্তবে সে রকম সংকট নেই। বাজার মনিটরিং না থাকায় যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *