রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিন : রাষ্ট্রপতি

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিন : রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ● বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে মিয়ানমারের দূত মায়ো মিন্ট থান বঙ্গভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে আবদুল হামিদ এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে তাদের ফেরত নিতে বলেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে আরও দুই লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে বাস করছে। ২০১৬ সালে অক্টোবরের পর বাংলাদেশে অনিবন্ধিত ৭৬ হাজার মিয়ানমারের মুসলিম নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা।

শরণার্থী প্রত্যাবাসনে দুই দেশেরই আলোচনা শুরুর তাগিদ দেন রাষ্ট্রপ্রধান। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারের সামরিক সরকার রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ ছিল। আশির দশক থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী কক্সবাজারে আসতে শুরু করে। সামরিক শাসনের অবসানের পর গণতন্ত্রপন্থি অং সান সু চির দল ক্ষমতা এলেও অবস্থা বদলায়নি। কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে এলেও দেশটির ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গার অধিকাংশকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি বলে রয়টার্সের খবর। চলাফেরার স্বাধীনতা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। গত বছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে; ধর্ষণ করা হয়েছে বহু নারীকে। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পর আসা ৬৫ হাজারসহ চার লাখের মতো রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। দশকের পর দশক আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে সরকার শরণার্থী সমস্যার সমাধান করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বঙ্গভবনে সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সবসময় তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে জোর দেয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ভৌগলিক নৈকট্য, অভিন্ন ইতিহাস এবং শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীরে প্রথিত। সন্ত্রাবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধাচরণকারী সশস্ত্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশ তার মাটিকে ব্যবহার করতে দেবে না। রাষ্ট্রপতি এ সময় বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুই দেশের সফর বিনিময়ের ওপর জোর দেন। বিদায়ী মিয়ানমারের দূত এ সময় আশা প্রকাশ করেন, আগামি দিনগুলোতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *