রোহিঙ্গা হত্যা : সময়ের নৃশংস গর্ভপাত

রোহিঙ্গা হত্যা : সময়ের নৃশংস গর্ভপাত

কাসেম ফারুক : রোহিঙ্গা এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। মানবেতর দৃশ্যের অভাবিত অধ্যায়। সময়ের এ এক নৃশংস গর্ভপাত। মানুষ হিং¯্র হয়। এতোটা নয়। মানুষ মরে। তবে এতো বীভৎস হয়ে নয়। আমরা চোখে দেখছি। নয়তো বিশ্বাস করতাম না। শুনছি মরিমরি আর্তনাদ। বেঁচে থাকার আকুতি এতো করুণ জানতাম না। আমরা ধার্মিক। আমাদের অভাব নেই। ওরাও ধর্মের কথা বলে। অথচ প্রকৃত মনুষ্যস্বভাব নেই। ওরা মানুষ নয়। যেন ধর্মে ওদের অধর্ম।

লাখ লাখ মানুষ হাসি ছেড়েছে মৃত্যুর ভয়ে। হাঁফ ছেড়েছে নাফ পাড়ি দিয়ে। এপারেই বাংলাদেশ। সহধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। নির্ভয়তা, নিশ্চয়তায় কোনও ভাটা নেই। হয়েছেও তাই। হাতে হাত রাখছে ছোট-বড় সবাই নির্বিশেষে। যেন সবাই সবার তরে। আস্থা জন্মেছে নিঃশ্বাসে ও বিশ্বাসে। পৃথিবী ফিরে পেয়েছে মুহাজির আনসারের সেই সোনালিযুগ। অমানবিক যুগের পিঠে চড়েই ঝা-া উড়ছে মানবতার। প্রকাশ পেয়েছে হাজার চারশো বছর আগের প্রতিকৃতি।

বাংলাদেশের মানুষের মানবীয় সীমারেখা অনন্ত। রাষ্ট্রীয় সীমানা সে তুলনায় সামান্যই। মানবিক সব চাহিদা তাই পূরণ করতে চাইলেও কিছু বিষয় বাধা হয়। নিরাপত্তা চাইতে পারে সকলের। কিন্তু দিতে পারে না। দিতে পারে, সাময়িক। স্থায়ী নয়। যেকোনো প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার মতো শক্তিশালী বাংলাদেশ এখনো নয়। তাই মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অপর হাত দিয়ে পরখ করতে হবে নিজের পেটটি।

আর্তমানবতার সেবায় এদেশের আলেমগণ অগ্রগামী সর্বদা। ইতোমধ্যে বন্যা-ব্যাধিসহ জাতীয় রাষ্ট্রীয় ধর্মীয় সব বিপর্যয়ে নিবেদিতপ্রাণ দেখেছি। একইভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। শরণার্থী শিবিরের প্রতিটি বসতিতে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের সেবার সুপ্রশস্ত হাত। ভাইয়ের বিপদে ভাইয়ের অস্থিরতা। ত্রাণ বিতরণে তাদের আন্তরিকতা। বসতি নির্মাণ। স্যানিটারি পায়খানা। বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন। অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প। মসজিদ। মকতব মাদরাসা। কুরআন কিতাব বিতরণসহ সবভাবেই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। এগিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে এক অভাগা জাতিকে।

তবে উল্লেখিত দ্বিতীয় বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে আলেমদের। রোহিঙ্গারা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। শরণার্থী শিবিরে পরাধীন জন্মেনি। নিজের ঘর মাটি ফিরে পাওয়া তাদের অধিকার। অধিকার ফিরিয়ে দেয়া তাদের প্রতি সঠিক সহানুভূতি। আমরা তাদের থাকার স্থান দিতে পারবো। তবে পাকাবাড়ি বানিয়ে পাকাপাকি করে নয়। তাই সেবার সর্বাগ্রে যেমন আলেমসমাজ। তেমনি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ঠিক রাখতে এ জাতিকে আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা দিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে সচেতন আলেমসমাজ। তবেই সমভাবে জনদরদির পাশাপাশি নন্দিত হবে আলেম দেশদরদি।

kashemfaruk71@gmail.com

● অক্টোবর ২০১৭, মাসিক পাথেয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *