লজ্জা এড়িয়ে আফিফে জয় বাংলাদেশের

লজ্জা এড়িয়ে আফিফে জয় বাংলাদেশের

লজ্জা এড়িয়ে আফিফে জয় বাংলাদেশের

পাথেয় রিপোর্ট : হতাশার চাদর মুড়ি দিয়ে লজ্জা ও ব্যর্থতায় শুরু হয়েছিল টিটোয়েন্টি যুদ্ধ। বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা সব হতাশ করে বিদায় নিয়েছিলেন। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মতো ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা যখন দারুণ হতাশার জন্ম দিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হৃদয়ে, তখন সেটাকে নিমিষে দূর করে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।

বয়স মাত্র ২০ ছুঁই ছুঁই। মোসাদ্দেক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে এই বয়সে দলকে নিশ্চিত হার থেকে রক্ষা করলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। বাংলাদেশকে এনে দিলেন ৩ উইকেটের এক লজ্জা এড়ানো জয়।

আফিফ হোসেন ধ্রুবর সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়েন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। মাত্র ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন আফিফ। যদিও শেষ মুহূর্তে ২৬ বলে ৫২ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। কিন্তু তাতে জয় পেতে আর কষ্ট হয়নি বাংলাদেশের। ২৪ বলে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন সৈকত। ২ বল বাকি থাকতে সাইফউদ্দিন মাদজিভাকে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন।

আফগানিস্তানের কাছে চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পরই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নখ-দন্ত বেরিয়ে পড়ে। এরপর জিম্বাবুয়ের কাছে বিসিবি একাদশের নামে একঝাঁক জাতীয় দলের ক্রিকেটারের হার চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবুও আশা ছিল, মূল লড়াইয়ে সাকিব আল হাসানরা ঠিকই পারবে হয়তো।
কিন্তু জিম্বাবুয়েকে ১৪৪ রানে বেধে ফেলার পরও যখন মাত্র ৬০ রানেই ৬ উইকেটের পতন ঘটে, তখন তো নিশ্চিত হারের যন্ত্রণাই চেপে বসতে যাচ্ছিল। আরও একটি লজ্জাজনক পরাজয় তখন যেন দরজায় কড়া নাড়ছিল।

কিন্তু আফিফ হোসেন ধ্রুবর ওপর অনেকেরই আস্থা ছিল। মিরপুরের প্রেসবক্সেও সবাই বলাবলি করছিল, এই ছেলেটির মধ্যে প্রতিভা আছে। সেই পারে বাংলাদেশকে এই লজ্জা থেকে বাঁচাতে। সঙ্গে যদি মোসাদ্দেক তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারে!

শেষ পর্যন্ত সেটাই প্রতিফলিত হলো। আফিফ হোসেন ধ্রুব জিম্বাবুয়ে বোলারদেরকে নিজেদের ওপর চেপে বসতে দেননি। বরং দেখিয়ে দিয়েছেন শন উইলিয়ামস, তেন্দাই চাতারা কিংবা কাইল জার্ভিসদের চেয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি এগিয়ে। জিম্বাবুয়ে বোলারদের উইতেটের চারপাশে পিটিয়ে মাত্র ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করলেন তিনি। যাতে ছিল ৮টি বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কার মার।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত জুটি তৈরিতে দারুণ সহযোগিতা করলেন। কোনো বাউন্ডারি নেই তার ৩০ রানের ইনিংসে। রয়েছে ২টি ছক্কা। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশেই মাঠ ত্যাগ করলেন তিনি।

টস হেরে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ১৮ ওভারে বাংলাদেশের সামনে ১৪৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। দুই ওপেনার লিটন দাস আর সৌম্য সরকার মোটামুটি একটা ভালো শুরু দিয়েছিলেন; কিন্তু ৩ ওভারে ২৬ রান যোগ করেই তারা দুজন সাজঘরের পথ ধরেন।

চাতারার করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন লিটন (১৪ বলে ১৯)। কাইল জার্ভিসের পরের ওভারের প্রথম বলেই তুলে মারতে গিয়ে বোকার মতো আউট সৌম্য সরকার (৭ বলে ৪)।

এর তিন বলের ব্যবধানে মুশফিকুর রহীমকেও (০) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়েছেন জারভিস। এরপর ১ রান করে চাতার দ্বিতীয় শিকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ সময় দলের রান মাত্র ২৯। উইকেট নাই ৪টি।

এরপর মাহমুদউল্লাহ আর সাব্বির রহমান কিছুটা আশার আলো জাগান। ২৭ রানের জুটি গড়ার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হয়ে যান এলবিডব্লিউ। ১৬ বলে তিনি করেন ১৪ রান। ৪ রান পরই, ১৬০ রানের মাথায় ফিরে যান সাব্বির রহমানও।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই হলেন সেরা : এক বছর সাত মাস আগে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সাকিব আল হাসানের ইনজুরির সুযোগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমেই শূন্য রানে আউট হয়ে গেলেন। সেই যে হতাশ হলেন, সে হতাশা আফিফ হোসেন ধ্রুবকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিলো দীর্ঘ সময়ের জন্য।

অতঃপর আফিফ ফিরলেন। কারো পরিবর্তে জায়গা দখল করতে নয়। স্বমহিমায় নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে। তাকে নিয়ে আগামী সম্ভাবনা দেখছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট। এইচপির খেলে যাচ্ছিলেন। খেলেছেন বিপিএল, ডিপিএলসহ অনেক টুর্নামেন্ট, লিগ ম্যাচ।

অবশেষে পূনরায় জায়গা পেলেন দলে এবং নিজের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচেই দলের জয়ের নায়কে পরিণত হলেন আফিফ। তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় পেলো বাংলাদেশ।

৬০ রানে যখন বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়ে গেলো, তখন আফিফ হোসেন ধ্রুবর ওপর হিমালয়ের সমান চাপ। সেই চাপ সামলে অবশেষে সপ্তম উইকেটে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৮২ রানের অবিশ্বাস্য এবং অসাধারণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে আসেন ধ্রুব।

অবশেষে তিনি আউট হয়েছিলেন। তবে তার আগে ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি এবং ২৬ বলে ৫২ রান করে আউট হলেন তিনি। শেষ কাজটুকু করে দেন সাইফউদ্দিন আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

নিশ্চিত পরাজয় থেকে যার ব্যাট বাংলাদেশকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে এলো তার হাতেই ওঠার কথা ম্যাচ সেরার পুরস্কার এবং সেটাই হলো। ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই অসাধারণ জয় এবং ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।

এমন পিটুনি আগে খাননি সাকিব : বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ায় টস জয় দিয়ে শুরু অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। ভাগ্যটা ভালোই মনে হচ্ছিল। দলের বোলাররা শুরুও করেছিলেন দারুণ।

সাকিব যদিও প্রথম বলেই ব্রেন্ডন টেলরের কাছে বাউন্ডারি হজম করেন। তবে পরের সময়টায় বল হাতে ওতটা খারাপ করেননি। প্রথম ৩ ওভারে দেন মোটে ১৯ রান। কে জানতো, শেষ ওভারে এসে এমন দুঃস্বপ্নের স্মৃতি জমা করবেন!

নিজের চতুর্থ আর জিম্বাবুয়ান ইনিংসের ১৭ নম্বর ওভারে সাকিব দিয়ে বসলেন ৩০ রান। যা তার টি-টোয়েন্টি তথা যে কোনো ফরমেটের ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার।

এর আগে কখনও এমন মার খাননি সাকিব। তাকে বেধড়ক পিটুনি দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল। ওই ওভারে তার শটগুলো ছিল এমন-৬, ৪, ৪, ৬, ৪, ৬।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের এই স্মৃতিটা হয়তো অনেক দিনই মনের মধ্যে থাকবে। সে যত ভালো বোলিংই করুন না কেন!

অন্ধকারে ঢেকে গেল মিরপুর স্টেডিয়াম : জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন বাংলাদেশি বোলারদের। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেল মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

ইনিংসের ১৮তম ওভারে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। ফ্লাডলাইটও জ্বালানো যায়নি। ফলে অনেকটা সময় খেলা বন্ধ রাখতে হয়।

রাত ৯টা ১৭ মিনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। থেকেছে ৯টা ২৩ পর্যন্ত। প্রায় ৬ মিনিটের মতো মাঠে বিদ্যুৎ ছিল না।

১৭তম ওভারটি করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন। ওই ওভার শেষ হওয়ার পরই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়াম।

খেলা শুরু হতে হতে সময় কেটে যায় প্রায় ৮ মিনিট। নতুন করে খেলা শুরু হলে ১৮তম ওভারটি করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তবে কি কারণে এমন বিভ্রাট ঘটেছে। সেটি সম্পর্কে এখনও কিছু জানানো হয়নি আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *