লিঙ্গ সাম্প্রদায়িকতা বনাম ইসলামে নারী অধিকার।। পর্ব- ৩

লিঙ্গ সাম্প্রদায়িকতা বনাম ইসলামে নারী অধিকার।। পর্ব- ৩

শেষ পর্ব

  • আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ 

উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের মূলত লাভবান করা হয়েছে। ইসলামে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মূলত তিন ধরনের উত্তরাধিকার সূত্র রয়েছে। এক, যাবিল ফুরুষ অর্থাৎ কুরআন মাজীদে যাদের নির্ধারিত হিস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে যে সব শ্রেণীর নির্ধারিত হিস্যার কথা বলা হয়েছে তন্মধ্যে নারীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচ শ্রেণীতে। ১. মা, ২. স্ত্রী, ৩. কন্যা, ৪. বোন, ৫. যীরেহেম রূপে। এক্ষেত্রে পুত্রের হিস্যার কথা কোন উল্লেখ নেই। দুই, যাবীল আরহাম। তিন. তা’ছিব। যাবীল ফুরূযগণের হিস্যা প্রদানের সাথে যারা হিস্যা পেয়ে থাকেন। যেমন পুত্র, ভাই ক্ষেত্র বিশেষ বোন ইত্যাদি।

মেয়ে যাবীল ফুরূয হিসেব

১. মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকা অবস্থায় এক মেয়ে থাকলে সমুদয় সম্পদের অর্ধেক পাবে।

২. দুই বা ততোধিক মেয়ে থাকলে সমুদয় সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ পাবে।

৩. ছেলে থাকলে মেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক।

স্ত্রী যাবীল ফুরুষ হিসেবে

১. সন্তান না থাকলে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পদের এক চতুর্থাংশ পাবে।

২. সন্তানাদি থাকলে এক অষ্টমাংশ পাবে।

মা হিসেবে

১. মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে কিংবা ভাই বোনদের মধ্য থেকে দু’জন বা ততোধিক থাকলে মা এক ষষ্ঠাংশ পাবে।

২. মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা-মাতা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ

দেয়ার পর বাকি সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পাবে।

৩. উল্লেখিত অবস্থা ছাড়া মা পুরো সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পাবে।

উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের মূলত লাভবান করা হয়েছে। ইসলামে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মূলত তিন ধরনের উত্তরাধিকার সূত্র রয়েছে।

বোন হিসেবে 

১. ভাই না থাকা অবস্থায় বোন একজন হলে অর্ধেক পাবে।

২. ভাই না থাকা অবস্থায় দুই বা ততোধিক বোন হলে দুই তৃতীয়াংশ পাবে।

৩. মৃত ব্যক্তির ভাই থাকলে বোন পাবে ভাইয়ের অর্ধেক।

৪. বোন যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ের সাথে থাকে তবুও আসাবা হবে।

৫. মৃত ব্যক্তির বোন যদি তার ছেলে অথবা ছেলের সাথে যাকে, তেমনিভাবে পিতা, দাদার সাথে আসলেও কিছুই পাবে না।

উল্লেখ্য, বোন কখনও যাবীল আরহাম হয় না।

দাদী-নানী হিসেবে

উল্লেখ্য, দাদী বা নানী এক ষষ্ঠাংশ পাবে। সমস্ত দাদী বা নানী মায়ের বর্তমানে বাদ পড়ে যাবে।

বি. দ্র. যাবিল আরহাম হলো প্রত্যেক ঐ নিকট আত্মীয় যার কোন নির্ধারিত অংশ নেই এবং যে যবীন ফরয নয়। চার শ্রেণীর লোকজন এই শ্রেণীর হতে পারে।

এক. যাদেরকে মৃত ব্যক্তির দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন কন্যা সন্তান, ছেলের কন্যা সন্তান।

দুই. মাইয়াতকে যাদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন যে সকল দাদা- দাদী, নানা-নানী মীরাছ থেকে বাদ পড়ে যায়।

তিন. যাদেরকে মৃত পিতা-মাতার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন বোনের

সন্তান, ভাইয়ের কন্যা, মা শরীক ভাইয়ের সন্তান।

চার. যাদেরকে মৃত দাদা-নানা বা দাদী-নানীর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন ফুফু, মামা, খালা, খালু।

বর্তমানে সাধারণ মানুষ ও ইসলাম অজ্ঞ সাধারণ শিক্ষিতগণ ইসলাম সম্পর্কে জানা না থাকায় পাশ্চাত্যের মত মনে করে, ইসলাম বুঝি ইয়াহুদী, খৃস্টান ধর্মের মত নারীদের বঞ্চিত করেছে। এটা তাদের অজ্ঞতা বই কিছুই নয়। ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সাত অন্ধের হাতি দেখার মত। এমনকি উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছাড়া আর কোন আয়াত শুনেছে পড়েছে বলে মনে হয় না। আর ইসলামের উত্তরাধিকার আইন গাণিতিক সূত্রে গাঁথা।

সম্পদের আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নারীর পূর্ণ অধিকার বিদ্যমান। আয়ের ক্ষেত্রে যেমন নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি সুবিধা পায় তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ধরতে গেলে মহিলাদের কোন বাধ্যতামূলক ব্যয় নেই। পক্ষান্তরে, পুরুষকে তার আয়ের বিরাট অংশই বাধ্যতামূলকভাবে ব্যয় করতে হয়। যেমন, (১) তার নিজের খোর-পোষ; (২) সন্তানাদি লালন-পালন ও খোর-পোষসহ যাবতীয় ব্যয়; (৩) পিতা-মাতার খোর-পোষসহ যাবতীয় ব্যয়; (৪) স্ত্রীর মোহরানা; (৫) বিয়ের ব্যয় ও ওলীমা ইত্যাদি; (৬) স্ত্রীর খোর-পোষসহ যাবতীয় ব্যয়; (৭) পিতার অবর্তমানে ভাই-ভগ্নির খোর-পোষ; (৮) যাকাত ইত্যাদি। কিন্তু নারীকে নিজের উপার্জন থেকে নিজের খোর-পোষের জন্যও ব্যয় করতে হয় না। অবস্থাভেদে পিতা, পুত্র, ভাই ও স্বামীর উপরই তা বর্তায়। যাকাত প্রদান ব্যতীত কোন বাধ্যতামূলক ব্যয় তার নেই। সে যদি স্বীয় সম্পদ থেকে সেচ্ছা প্রণোদিতভাবে সন্তান, স্বামী বা পিতা-মাতার জন্য ব্যয় করে তবে সে সদকার ছোয়াব পাবে। এর জন্য কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রক্ষাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ রা. ছিলেন দরিদ্র। তাঁর স্ত্রী ছিলেন পেশাজীবি এবং ধনি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তিনি বললেন, ‘হে রাসূল! আমার স্বামী দরিদ্র। আমার নিজের আয় রোজগার আছে। আমি কি স্বামী, সন্তানের জন্য ব্যয় করলে কিছু পাব?’ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি দু’টি সদকার ছোয়াব পাবে।

বর্তমানে সাধারণ মানুষ ও ইসলাম অজ্ঞ সাধারণ শিক্ষিতগণ ইসলাম সম্পর্কে জানা না থাকায় পাশ্চাত্যের মত মনে করে, ইসলাম বুঝি ইয়াহুদী, খৃস্টান ধর্মের মত নারীদের বঞ্চিত করেছে। এটা তাদের অজ্ঞতা বই কিছুই নয়। ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সাত অন্ধের হাতি দেখার মত। এমনকি উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছাড়া আর কোন আয়াত শুনেছে পড়েছে বলে মনে হয় না। আর ইসলামের উত্তরাধিকার আইন গাণিতিক সূত্রে গাঁথা। ফাঁক-ফোকরের অবকাশ নেই। সরল অংক যেমন একবার কোথাও ভুল হলে জীবনেও মিলানো সম্ভব নয় এখানেও তা-ই। তাই সরলীকৃত সূত্রে এখানে এগুতে হয়। তবেই দেখা যাবে এর চেয়ে ইনসাফপূর্ণ সুষম ও যৌক্তিক গাণিতিক বিধান আর কিছুই হতে পারে না।

শেষে আমি ওলামায়ে কিরাম ও নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাব, আপনাদের নেতৃত্বে আজ নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলুন। তাহলে বিপথগামীরা নারীদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাবে না। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সকলকে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর পরিচালিত করুক। আমীন।

১ম পর্ব

২য় পর্ব 

ইসলাম সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা বই থেকে চিত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *