‘লোকসান ঘোচাতে’ ফের মাংসের কেজি ৭০০

‘লোকসান ঘোচাতে’ ফের মাংসের কেজি ৭০০

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মাস দুয়েক আগে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল গরুর মাংস। প্রতি কেজির দর ৭৫০ থেকে কমে ৬০০ টাকায় নেমেছিল। মাংসের দর কমার কারণে সবজির বাজারে দামেও স্বল্প সময়ের জন্য কিছুটা প্রভাব পড়ে। তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে যাচ্ছিল, এই দামে মাংস বিক্রি করে তারা লোকসান গুনছে। তারপরও সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মাংসের দাম ৬৫০ টাকার মধ্যেই স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরদিন থেকে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার অজুহাতে আবার গরুর মাংসের দর কেজিতে এক লাফে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় এবং বিভিন্ন মহলের চাপ থাকায় দুই মাস তাদের হাজার হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এভাবে লোকসানের ভার টেনে নেওয়া তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। অন্যদিকে আগামী কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খামারিরা এখনই বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করছে। তারা মাঠ পর্যায়ে গরুর দর বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে মাংস বিক্রিতে। যদিও খামারিদের দাবি, তারা গরুর দর বাড়ায়নি।

ক্রেতারা বলছে, গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেও ব্যবসায়ীরা লাভ করেছে। এখন রমজানের আগে আরও বেশি লাভ করতে তারা সবাই মিলে ফের সিন্ডিকেট করেছে। সামনে রমজান এলে এই দর হয়তো আরও বাড়ানো হবে। তাই এখনই বাজারে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। মাস দুয়েক আগে ঢাকার মালিবাগ, শাহজাহানপুর,

খিলগাঁও এলাকায় ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করে ব্যবসায়ীরা। তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব এলাকায় মাংস কিনতে ছুটে আসে ক্রেতারা। কারণ কোথাও কোথাও তখনও ৭০০ বা ৭৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি হচ্ছিল। মাংসের দামে এই অসম অবস্থা ক্ষোভ তৈরি করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এক পর্যায়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায় মাস দেড়েক আগে মাংসের দর নির্ধারণে বৈঠক করে খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তখন সিদ্ধান্ত হয়, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৬৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা হবে। এ দরেই এতদিন মাংস বিক্রি হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পরদিন থেকে আবার মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী এনামুল হোসেনের দাবি, নির্বাচনের কারণে দুই মাস আগে মাংস বিক্রি নিয়ে বড় খেলা হয়েছে। এ সম্পর্কে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। তবে গত দুই মাসে হাজার হাজার টাকা লোকসান দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এখন গরুর দর বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই মাংসের দর বাড়াতে হচ্ছে।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ‘খোরশেদ গোশত বিতান’-এর বিক্রয়কর্মী আলাউদ্দিন বলে, ‘গত দুই মাসে আমাদের হাজার হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তখন শাহজাহানপুরের খলিল গোশত বিতানের সামনে ৫৯৫ টাকা কেজিতে মাংস কেনার জন্য লম্বা লাইন ছিল। এখন খলিল গোশত বিতানেও ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে। রিকশাচালক বা দিনমজুর যারা, তারা বেশি দামের কারণে গরুর মাংস কিনতে পারত না। তাই এতদিন গরিব মানুষের জন্য কিছু সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আর পোষাচ্ছে না।’ তবে তারা আগের মতো হাড়, চর্বি মিশিয়ে ৬০০ টাকা দরেও কিছু মাংস বিক্রি করছে বলে জানায় সে।

মাংসের দাম কমানোর বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিল খিলগাঁওয়ের ‘খলিল গোশত বিতান’। প্রতিষ্ঠানটির মালিক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আজ থেকে আমি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করব। কারণ গরুর দর মাস দুয়েক আগে কিছুটা কমেছিল। এখন আবার বেড়েছে। সে জন্য আমাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে।’

মালিবাগের সাজ্জাদ মাংস স্টোরের মালিক মো. শাহজাহান বলেন, এতদিন হাড়-চর্বিসহ সব কিছু মিলিয়ে মাংসের কেজি ৭৫০ টাকার মতোই পড়ত, যা ক্রেতাদের অনেকেই বুঝতেন না। কিন্তু এখন চর্বি ও খাওয়ার অযোগ্য অংশগুলো দেওয়া হচ্ছে না।

একই বাজারের তাহের গোশত বিতানের মালিক তাহের হোসেন বলেন, লোকসান আর দেওয়া সম্ভব নয়। শনিবার থেকে মহিষের মাংস বিক্রি হবে ৭৫০ টাকা দরে।

এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘কোরবানিকে কেন্দ্র করে খামারিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করছে। ফলে মাঠে জবাইয়ের মতো গরুর সংকট দেখা দিয়েছে। গরুর দর বাড়লে তো কম দামে মাংস বিক্রি সম্ভব নয়। বাজারে শৃঙ্খলা আনা দরকার।’

তবে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেনের দাবি, গরুর দর বাড়েনি। তিনি বলেন, এখন শুকনো মৌসুম চলছে। পর্যাপ্ত পশুখাদ্য, বিশেষ করে ঘাস পাওয়া যাচ্ছে। পশুর অন্যান্য খাদ্যের দরও কমতির দিকে। তাই এখন খামারিদের গরুর দর বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। আগের দরেই গরু বিক্রি করছে খামারিরা।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি গরুর দাম অন্তত ১০ হাজার টাকা বেড়েছে বলে কিছু ব্যবসায়ী বলেছে। খামারিরা কেন দর বাড়াল, তা জানতে হবে। তা ছাড়া মাংসের দাম কীভাবে কমনো যায়, সে বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ ক্ষেত্রে কেন উদ্যোগ নিচ্ছে না– সে প্রশ্ন থেকে যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর তো দোকানে দোকানে গিয়ে পাহারা দিতে পারবে না। তবে জনস্বার্থে অধিদপ্তরের কাজ চলমান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *