তানজিল আমির ● আজকের শিশু আগামীর সম্পদ। কথাটি খুবই প্রসিদ্ধ। শিশু তো শিশুই। শিশুদের জীবনযাপনকে নির্ধারিত কোন ছকে পরিচালিত করা যায় না। হাসি-কান্না, খেলাধুলার মাঝেই অতিবাহিত হয় শিশুকাল। পৃথিবীর সকল রীতিনীতি-আনুষ্ঠানিকতার ঊর্ধ্বে তারা। কিন্তু মানবসৃষ্ট বিভিন্ন বিপর্যয় সবসময়ই শিশুদের শৈশবকে বিপন্ন করে তোলে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে লাখো লাখো শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা তিনলক্ষেরও বেশী। এতগুলো শিশু শৈশবেই হারিয়েছে পৃথিবীতে সুন্দরভাবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো কত কষ্টে আছে, শরণার্থীশিবিরগুলো পরিদর্শন করলে তা কিছুটা অনুভব করা যায়। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু এবং এরমধ্যে আবার ৩০ শতাংশ শিশুরই বয়স ৫ বছরের নিচে। বিপুলসংখ্যক এ শিশুরা ভুগছে তীব্র অপুষ্টিতে। এদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। যে মানবেতর পরিবেশে শিশুরা রয়েছে, তা দেখাটাও সত্যিই কষ্টের। বিশেষত যেসব মহিলারা সহায়তা নিতে আসে, তাদের কোলে বাচ্চারা সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে। হুড়োহুড়ি করে ত্রাণ নেওয়ার সময় মায়েরা বাচ্চাদের সামলে রাখতে পারেন না। দৃশ্যগুলো সবার মনেই রেখাপাত করবে। শাহপরীর দ্বীপে নবাগত শরণার্থীদের মাঝে আমরা কাজ করেছি। নৌকা থেকে নামার সময় শিশুরা খুব শান্তভাবেই নামে। ভ্রমণের কোন কৌতূহল তাদের মাঝে নেই। যেন তারা এই দুর্ভাগ্যকে খুব সহজেই মেনে নিয়েছে। মৃত্যুপুরী থেকে যে তারা বাঁচতে পেরেছে, এটি যেন উপলব্ধি করতে পারছে। শিশুদের চাহনীই সেটি বলে দেয়। এক সকালে শাহপরীর দ¦ীপ মাদরাসা মাঠে নবাগত শরণার্থীদের খাবার দেওয়া হচ্ছিলো।
লক্ষ্য করলাম, একজন শিশু আরেক শিশুকে খাইয়ে দিচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে চোখে পানি এসে গেলো, যে মানবতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি, ছোট্ট শিশুরা তা হারায়নি। তারা বড় হলে বুঝবে, পৃথিবীতে এখন মানবিকতার মূল্য নেই। কর্পোরেট এ পৃথিবী মানবিকতাকে বহু আগেই বিদায় জানিয়েছে।
● অক্টোবর ২০১৭, মাসিক পাথেয়