পাথেয় রিপোর্ট : পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমে ছাপা হয়েছিল কাউসার মাহমুদ লিখিত ‘আমি হাসু আপার কাছে যাব’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ। রাতের শেষ আবেশটুকু এখনো বাকী। আধো আলো অাধো অন্ধকার ধরে এখনও জেগে আছে আকাশ। দিগন্তে লালচে আভার চিক্কণ রেখাটি খুব ক্ষীণ হয়ে জ্বলে উঠবে এখনি। কিন্তু এ আলো ফুটবার আগেই বাংলার ইতিহাসে মুদ্রাঙ্কিত হলো একটি বীভৎস অধ্যায়ের। নৃশংস বর্বর হত্যাকাণ্ডে নিভে গেলো বাঙালির জাতিসত্বায় বিভা ছড়ানো মুজিবের পরিবার। সে সঙ্গে ছোট্ট শেখ রাসেলও।
বৃহস্পতিবার মুজিব পরিবারের সবচেয়ে আদরের শিশু শেখ রাসেলের জন্মদিন। একটি পৃথক পৃথক জন্মলাভ করলেও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলো ছড়ানো এই শিশুও ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত লাভ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মদিন আয়োজন হচ্ছে অনেক অনুষ্ঠানের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযোগ্যভাবে পালন করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে তিনি দেশের সকল শাখা সংগঠনসমূহকেও অনুরূপ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আমরা জানি, সেদিন একটি শিশু ভয়ে কেঁপে উঠছিল বারবার। ফুটফুটে এমন কোমল মুখের বলিরেখায় ভেসে উঠেছিল তার দাগ। রক্তের স্রোত বয়ে যাওয়া ঘরের মেঝ জুড়ে বাবা, মা, ভাইয়া, ভাবিসহ সবকক’টি নিথর দেহ দেখে একদম কুঁকড়ে গিয়েছে সে। একটি অপরিচিত পৃথিবী তার সামনে মৃত্যুপুরী হয়ে ধেয়ে এলো তখন । কোথাও কেউ নেই। এ যেন ঘুমিয়ে থাকা এক প্রাণহীন ঘর। মায়ের কাছে গিয়ে দেখে তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এতো ডাকে তবুও জাগে না মা। কেন কথা বলে না ‘মা’। ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে বলে ‘আমি হাসু আপার কাছে যাবো’।
ঘাতকেরা আরো নির্মম হয়ে ওঠে। নারকীয় জিঘাংসায় উন্মাদ হয়ে ওঠে তাদের অপ্রকৃতস্থ বোধ। দশ বছর বয়সী শিশুর আর্তনাদ সামান্যও রেখাপাত করেনি এই পাষণ্ডদের। তারা একেও গুলি করে । ছোট্ট খুকুর মস্তক আর বের হওয়া চোখ নিঃসাড় পড়ে থাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। ছেলেটিকে ‘রাসেল’ বলে ডাকবার কেউ বেঁচে ছিলো না তখন। তার হাসু আপা তখন খুব দূরে। অদূরে। তার ডাক পৌঁছে না কোথাও। ভয়ার্ত এই আহ্বান জানালার ফাঁক গলে আকাশে মিলিয়ে যায়।