শাপলা ফুটলেই মুখে হাসি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম (মাগুরা প্রতিনিধি) : বর্ষায় পানি জমলেই দেখা যায় শাপলা হাসি। শিশু-কিশোর-কিশোরীদের হাতে এই শাপলা আরও দারুণ। দলবেঁধে ওরা শাপলা কুড়াতে যায়। কুড়াতে যায় শালুকও। ডুবিয়ে ডুবিয়ে শালুক কুড়িয়ে বাড়িতে এনে তা সিদ্ধ করে খায়। বর্ষা মৌসুমে মাগুরার বিভিন্ন বিল ও ঝিলের বিস্তীর্ণ জলাভূমি জুড়ে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এই বিল-ঝিলের শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েকশ দরিদ্র মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার তাগিদে মানুষগুলো ছুটে যান জলাভূমির বুক থেকে শাপলা তোলার জন্য। শাপলা তুলে ভরদুপুরে সব শাপলা একসঙ্গে করে বাজারে বিক্রি করেন। আর এই আয় থেকেই চলে তাদের সংসার।
বছরের অন্যান্য সময় কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার সময়টাতে এসব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। তখন জীবন ধারণ করা কার্যত অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে শাপলা বিক্রি করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিন কাটায় এরা।
আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বিলে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এ সময়টাতে তারা অন্যান্য সময় থেকে বেশি শাপলা তুলতে পারেন। পানি যত গভীর সেখানকার শাপলা তত ভালো হয়।
সদর উপজেলার বিভিন্ন বিল-ঝিল ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে এখন অথৈ পানি। ডিঙি নৌকা দিয়ে কেউ বিলে মাছ ধরছে কেউবা আগাছা পরিষ্কার করে নৌকা নিয়ে বিলের গহীনে যাচ্ছেন শাপলা তুলতে। আবার কেউ বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছেন নৌকায়। নৌকায় করে শাপলা এনে বাজারে বিক্রি করার জন্য মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন তারা।
স্থানীয় পরশ মোল্ল্যা বলেন, তিনি জন্মের পর থেকেই এসব বিলে শাপলা ফুল ফুটতে দেখছেন। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজার ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে বিলের পার্শ্ববর্তী এলাকার অসংখ্য পরিবার।
একাধিক ব্যক্তি জানান, বছরের পাঁচ মাসই এসব বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল অনেক পরিবার। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলে আষাঢ় থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত শাপলা ফুল পাওয়া যায়।
কয়েক বছর ধরে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করা আমিন উদ্দীন জানান, বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকাই শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করি। অন্য সময় থেকে এ সময়টাতে খুব স্বচ্ছলভাবে চলতে পারি। বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সকালে আমরা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে শাপলা তুলতে যাই। প্রতিটি দলে ১০-১২ জন সদস্য থাকে। প্রতি দল মিলে দুই আড়াইশ কুড়ি (প্রতি কুড়িতে ৮০-১০০টি) শাপলা তুলতে পারি। আর এতে আমাদের জনপ্রতি দৈনিক ৮শ-১ হাজার টাকা আয় হয়, যা বছরের অন্য সময় থেকে বেশি। বছরের অন্য সময়টাতে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু এ সময়টা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।