পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কুয়াশাভাঙ্গা মৃদু রোদের ঈষৎ উষ্ণ আবহাওয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, হাজার হাজার মুসল্লিদের উপস্থিতিতে জমিয়তে উলামাইয়ে হিন্দের বিপ্লবী নেতা, ভারতের প্রাচীন মাদ্রাসা ‘আমরুহা মাদ্রাসার’ সদরুল মুদাররিস ও মুহাদ্দিস মাওলানা কারী সাইয়্যিদ আফফান মনসুরপুরীর ইমামতিতে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের বেলঙ্কা জামিয়াতুল ইসলাহ ময়দানে বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী কয়েক হাজার মুসল্লি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন যানবাহন এবং পায়ে হেঁটে শরীক হয়েছেন এই বৃহত্তম জুমার জামাতে।
নামাজে আগে জুমার বয়ানে মাওলানা কারী আফফান মনসুরপুরীর বলেন, ইজতিমায় শরীক হওয়ার মানে হলো, দ্বীনি পরিবেশে থেকে আলেম ওলামা ও বুযুর্গানে দ্বীনের মাধ্যমে নিজেদের আমলগুলো শুধরে নেওয়া, তা যেন শরীয়তের অনুকুল হয় সেই মেহনত করা মশকের মাধ্যমে আমলের উপর অভ্যস্ত হওয়া’।
তাসাওউফের গুরুত্ব বুঝাতে তিনি শাইখুল হাদীস হযরত জাকারিয়া (রহ.) এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শাইখুল হাদীস হযরত জাকারিয়া (রহ.) আপবীতিতে বলেন, মুহাম্মদ আলী জওহার রহ. একবার রায়পুর যাওয়ার সময় আমাকে বললেন, তাসাওউফ কী জিনিস? উত্তরটা জানা আমার প্রয়োজন। আমি রায়পুর যাচ্ছি। উত্তর এখনি দিতে হবে না। দুই দিন পর এসে উত্তরটা শুনে যাবো।
জাকারিয়া রহ. বলেন, এটার জন্য আমার দুই দিনের প্রয়োজন নেই। শুনুন, প্রত্যেক কাজকে সহীহ নিয়তের সাথে শুরু করা, আর যখন আল্লাহ সামনে দাঁড়াবে যখন ইবাদাত করবে তখন এটা খেয়াল করবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন, কমপক্ষে এতটুকু তো অবশ্যই ধ্যান করতে হবে যে যে, আল্লাহ তো আমাকেদেখছেন!
মুহাম্মদ আলী জওহার রহ. বলেন, এই কথার দ্বারা আমার কাছে তাসাউফের হাক্বীকত আল্লাহ খুলে দিয়েছেন। তাসোউফের এর’চে চমৎকার কোনো উদাহারণ আর হয় না।
এই ঘটনা উল্লেখ করে ক্বারী উসমান মানসুরপুরী বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য এটা সবচে’ বেশি প্রয়োজন যে, আমার প্রত্যেকটা কাজ আল্লাহর জন্য এবং তাঁর রাজি-খুশির জন্য করতে পারছি কি না এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া। এইভাবে চলতে পারলে তাসাওউফের পথে চলে আমরা আমাদের জীবন, আমল ও আখেরাতের পথকে সুগম করতে পারবো।’
মুমিন জীবনের মোউলিক কাজগুলোর ফিরিস্তি দিতে গিয়ে হিজরি ৩য় শতকের প্রখ্যাত সূফী হযরত সাহল তাসতারী রহ এর একটি বানী উধৃত করে বলেন, আকাবিরে আসলাফ এমন সাতটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন যেগুলো প্রত্যেকটি আমাদের আমলে নিয়ে আসলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে অবশ্যই সফলকাম হবো, সেগুলো হচ্ছে-
আল্লাহর কালামকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরা
রাসূল সা. এর আনুগত্যের মাধ্যমে সুন্নতের উপর কায়েম থাকা
হালাল আয়-রোজগার করা ও হালাল ভক্ষণ করা
মাখলুককে কষ্ট দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
তাওবা করা এবং
হক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া
সব শেষে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাওলানা আফফান মনসুরপুরী বলেন, আল্লামা মাসঊদ (দা.বা.) আমাদের জন্য এত সুন্দর মনোরম পরিবেশে এই ইসলাহী ইজতেমা আয়োজন করেছেন। যার কারণে আমরা এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর জিকির করতে পারছি। দ্বীনের আলোচনা শুনছি। ঈমান তাঁজা করছি। আমাদের এসবের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা সবাই তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
জুমার নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহের জন্য শান্তি কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ, আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.)-এর খলিফা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের আহ্বানে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে আয়েজিত তিন দিনব্যাপী ইসলাহী ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা কমিটি।