পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন সময় শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করেছে সরকার। শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন দপ্তর ও প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বেশি প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। মাধ্যমিক পর্যায়ে মোটামুটি প্রশিক্ষণ হচ্ছে। পিছিয়ে আছেন কলেজ ও বিশ্বদ্যািলয়ের শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অধীনস্ত কলেজ শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে গঠিত হচ্ছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি (ইউটিটিএ)। তবে প্রাথমিক স্তরেই অধিক প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেন শিক্ষাবিদরা। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে তেমন বেগ পেতে হয় না। শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ধরন ভিন্ন হওয়ায় এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়।
- প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন প্রশিক্ষণ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত সহকারী শিক্ষকদের প্রথমে ১০ থেকে ১৫ দিনের ইন্ডাকশন ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা পাঠদানের প্রাথমিক ধারণা পান। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে এসব শিক্ষককে দেড় বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স করানো হয়। যেখানে তাঁরা বিষয়ভিত্তিক পাঠদানে দক্ষতা অর্জন করেন। শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ছয় দিনব্যাপী বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
- মাধ্যমিকে প্রশিক্ষণ
জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শিক্ষাক্রমের আলোকে বিষয়ভিত্তিক পাঠদানের বাইরে তেমন কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তবে পদোন্নতির জন্য বিএড কোর্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তাঁরা।
মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ উইং) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য জানান, দক্ষতাভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রমে দুই ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অনলাইন প্রশিক্ষণ ৪০ মিনিটের এবং সরাসরি প্রশিক্ষণ ছয় দিনের। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন তিন লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষক। চলতি মাস পর্যন্ত এসব শিক্ষকের মধ্যে দুই লাখ ৮০ হাজার শিক্ষককে সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
- বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের প্রাথমিক ধারণা দিতে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও বরাদ্দের অভাবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। নবনিযুক্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৪ সাল থেকে পরিচালিত হচ্ছে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (সিইটিএল)। দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছয় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতি ব্যাচে প্রায় ৩৫ জন করে প্রশিক্ষণ শুরু হলেও বরাদ্দের অভাবে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে ২০১৫ সালে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) গঠন করে সিইটিএলকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইকিউএসি চালুর জন্য গত বছর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসি সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি (ইউটিটিএ) গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কলেজ শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নবনিযুক্ত শিক্ষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যন্ত সবাইকে চার থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। যেখানে তাঁরা পাঠদানের প্রাথমিক ধারণা থেকে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পাবেন। আশা করছি আগামী চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’
- কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. হাসানুর রহমান জানান, চলতি বছর থেকে আওতাধীন কলেজ শিক্ষকদের সরাসরি বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রামের (সিইডিপি) মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামের ইতিহাসসহ মোট আট বিষয়ে ২৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সিইডিপির অধীনে মোট ১৬ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা।