শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম জাতীয় মিষ্টি মেলার আয়োজন

শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম জাতীয় মিষ্টি মেলার আয়োজন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি ছাড়া কি বাঙালি আত্মীয়ের বাড়ি যেতে পারে? বৈশাখের প্রথম দিনে হালখাতা, ঈদ, পূজা-পার্বণ বা বিয়েশাদি যা-ই বলুন; মিষ্টি ছাড়া কি আপ্যায়ন পরিপূর্ণ হয়?

যুগে যুগে বাঙালির খাদ্যতালিকার অন্যতম অনুষঙ্গ মিষ্টি। নামে-রঙে-স্বাদে বৈচিত্র্যময় কত মিষ্টিই আমাদের কারিগরেরা তৈরি করেন দেশের প্রতিটি প্রান্তে। দু-চারটি জেলার কিছু মিষ্টির নাম সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

সব জানাতে আর চেখে দেখার সুযোগ করে দিতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে মিষ্টিমেলা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় মিষ্টিমেলা।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার মিষ্টিমেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পী হাশেম খান।

হাশেম খান বলেন, এ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে আছে বিভিন্ন রকম মিষ্টি। কুমিল্লায় আছে এক রকম, রাজশাহীতে আরেক রকম। আছে নানা বৈচিত্র্য। মিষ্টি নিয়ে এটা একটা দারুণ আয়োজন।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘নেতিবাচক অনেক কিছু এই দেশের নামে প্রচার হয়। আমরা “শিল্পীর শহর” নিয়ে একটা কাজ করি।

কিছুদিন পিঠা উৎসব করেছি। আমরা বলেছি, প্রতি ঘরে ঘরে পিঠাশিল্পী আছে। অনেক শিল্পী আমরা পেয়েছি, সঙ্গে দর্শকও। এই মিষ্টি উৎসবে যেসব শিল্পীরা মিষ্টি উৎপাদন করে, তাদেরও চিহ্নিত করতে চাই। আমাদের অনেক মিষ্টির জিআই হয়েছে, আরও যেসব হওয়া উচিত, তা নিয়ে কাজ করব।’ আয়োজকেরা জানান, দেশের ৬৪ জেলা থেকে ৬৪টির বেশি মিষ্টির স্টল নিয়ে এসেছেন মিষ্টি কারিগরেরা। একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বসছেন শিল্পীরা।

ঐতিহ্য হিসেবেও মিষ্টির ইতিহাস দুই থেকে আড়াই শ বছরের। সাতক্ষীরার সন্দেশ বা নলেন গুড়ের সরপুরি, দ্বীপজেলা ভোলার মহিষের দুধের টক দই, চাঁদপুরের মতলবের বিখ্যাত ক্ষীর, চট্টগ্রামের সাদা মিষ্টি, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, ঢাকার বাকরখানি, রাজবাড়ীর চমচম, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, খুলনার সুন্দরবনের মধু, যশোরের খেজুরের গুড় ও জামতলার মিষ্টি, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি, নওগাঁর প্যারা সন্দেশ, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, ময়মনসিংহের মণ্ডা (মুক্তাগাছা)—এ রকম আরও কত মিষ্টি দেখা যাবে, স্বাদও নেওয়া যাবে এই মেলায়।

দেশের জিআই পণ্য হিসেবে মিষ্টান্নের মধ্যে নিবন্ধন পেয়েছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার রসমালাই, যশোরের খেজুর গুড়।

মিষ্টিমেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম বলেন, ‘এত ধরনের মিষ্টি আছে, সেটাই তো জানা ছিল না। মিষ্টি চেখে দেখছি, পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কে জানতেও পারছি।’

পাঁচ দিনব্যাপী এ মিষ্টিমেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় থাকবে লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *