শিশুর নিউমোনিয়া

শিশুর নিউমোনিয়া

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় এক লাখ শিশু মারা যায়। এর মধ্যে ২৪ হাজারের (২৪ শতাংশ) মৃত্যু হয় শুধু নিউমোনিয়ার কারণে। সারা পৃথিবীতে এই হার ১৪ শতাংশ।

তাই শিশুদের নিউমোনিয়া সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালিত হয়।

নিউমোনিয়া ফুসফুসের সংক্রমণ। ফুসফুস হচ্ছে একটি উল্টানো ‘গাছ’, যা শাখাপ্রশাখায় বিভাজিত হয়ে পাতায় শেষ হয়। পাতার অংশকে বলে অ্যালভিওলাই। এই অ্যালভিওলাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হলে শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ

নিউমোনিয়া হলে শিশুর জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও দ্রুত শ্বাস হয় এবং বুক দেবে যায়। শিশু খেতে ও ঘুমাতে পারে না; খুব কান্নাকাটি করে। প্রতি মিনিটে শ্বাস হয় ৪০ থেকে ৬০ বার বা এর বেশি। চিকিৎসক বুকে স্টেথিসকোপ দিয়ে বিশেষ আওয়াজ শুনতে পান।

নির্ণয়

রক্ত পরীক্ষা করালে শ্বেতকণিকার আধিক্য দেখা যাবে, সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি) বেড়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বুকের এক্স–রে, যেখানে ফুসফুসের কিছু অংশ বা অনেক অংশ সাদা হয়েছে বলে মনে হবে।

চিকিৎসা

সঠিক রোগনির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। শিশু খেতে পারলে মুখে অ্যামক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া যায়। বেশি অসুস্থ মনে হলে, খেতে না পারলে, বেশি শ্বাসকষ্ট হলে বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশের নিচে নামলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

প্রতিরোধ

শিশুকে বুকের দুধ ও সুষম খাবার দিলে; শিশুর সামনে ধূমপান বা রান্না না করলে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক টিকা যেমন নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিলে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কমে যায়।

নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস

ছোট্ট শিশুদের শ্বাসকষ্টের আরেকটি প্রধান কারণ ব্রঙ্কিওলাইটিস। এর লক্ষণও প্রায় নিউমোনিয়ার মতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে করালে ফুসফুস বেশি কালো ও বড় মনে হয়। রক্তের শ্বেতকণিকার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। শীতে ব্রঙ্কিওলাইটিসের প্রাদুর্ভাব হয়।

ব্রঙ্কিওলাইটিস কয়েকবার হতে পারে; কিন্তু নিউমোনিয়া সাধারণত একবার হয়, যদি শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে যাতে আমরা ভুলবশত ব্রঙ্কিওলাইটিসকে নিউমোনিয়া ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা না করি। কারণ, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *