পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আগের দিনের তুলনায় গতকাল রবিবার দেশে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। কমেছে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতিও। আগের দিন শনিবার দেশের ১১ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও গতকাল তা নেমে এসেছে চার জেলায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ সোমবার থেকে ধীরে ধীরে কমতে পারে শীতের তীব্রতা। তবে সারা দেশে চলমান কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি কেটে সূর্যের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে ১৭ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ মো. বজলুর রশিদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) সিলেট, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, খুলনা ও পিরোজপুরের দিকে সূর্যের আলো পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রংপুর, রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইল, ঢাকা হয়ে একেবারে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাতির শুঁড়ের মতো অঞ্চলে কুয়াশা সারা দিনই ছিল।
ফলে এই অঞ্চল সূর্যের আলো পায়নি। আজ (গতকাল) শৈত্যপ্রবাহ অনেকটাই কমেছে। আগামীকাল (আজ) তা আরো কমতে পারে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে দু-এক জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ থাকবে।
বজলুর রশিদ বলেন, দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গতকাল সূর্যের দেখা মিলেছে। আজ পরিস্থিতির আরেকটু উন্নতি হতে পারে, কমবে শীতের তীব্রতা। তবে ঢাকায় আজও দিনে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি থাকার সম্ভাবনা বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেছে। আজ তা কোনো কোনো অঞ্চলে কমে আসতে পারে।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৮ ডিগ্রি এবং রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি পরিস্থিতি ছিল আরো কয়েকটি অঞ্চলে। পাবনার ঈশ্বরদীতে এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রংপুর ও নওগাঁর বদলগাছীতে ১০.৩, বরিশালে ১০.৫ ও যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় এ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামগ্রিকভাবে গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৫ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখনো গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ডিগ্রি কম রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সোমবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
দিনে সূর্যের দেখা মিলছে না, ব্যাহত স্বাভাবিক জীবন
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে ছয় দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে সড়ক ও মাঠঘাট। রাতেও বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা, সঙ্গে বইছে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। কুয়াশার কারণে অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল।
তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। শহরের মিস্ত্রিপাড়া মহল্লার রাজমিস্ত্রিদের সরদার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে, শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
বীজতলায় চারা প্রস্তুত হলেও বোরো চাষ শুরু করতে পারেননি এই জেলার কৃষকরা। সদর উপজেলার বালুপাড়া গ্রামের আবুজার হোসেন জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না।
উত্তরের আরেক জেলা রংপুরে ঘন কুয়াশার ও হিমেল হাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। পাঁচ দিন ধরে বেশির ভাগ সময়ই আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, সরকারিভাবে প্রায় ৬০ হাজার কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে আসছেন না। তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের অনেকেরই উপার্জন কমে গেছে। কনকনে ঠাণ্ডায় কৃষকরা কাদাপানিতে নেমে ধান রোপণ করতে পারছেন না।
নওগাঁর বদলগাছীতে তিন দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর থেকেই বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে ঘন কুয়াশা। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে রাস্তাঘাট। সকালেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলছে।
কুড়িগ্রামে টানা ছয় দিন দেখা মেলেনি সূর্যের। হিমেল হাওয়া, মেঘলা আকাশ ও ঘন কুয়াশার কারণে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনপদ। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আতিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চার দিনেও দেখা মেলেনি সূর্যের। তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে রয়েছে দরিদ্র মানুষ। নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরদার মো. ফজলুল করিম বলেন, সরকারিভাবে একটি পৌরসভাসহ পাঁচটি ইউনিয়নে তিন হাজার ১২০টি কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। তবে চাহিদা অনেক বেশি।