৫ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

শেখ হাসিনার জাপান সফর চূড়ান্ত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও’র আমন্ত্রণে আগামী ২৫-২৮ এপ্রিল শেখ হাসিনা জাপান সফর করবেন। এবারের সফরে ৮টি স্মারক সই করার সম্ভাবনা আছে। তবে এবার মূল গুরুত্ব পাবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক সই।

একইসঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত স্তরে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে জাপানের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের দিক উন্মোচন হবে বলে আশা করছে বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকরা।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এখানকার ভোক্তা বাজার অনেক বড়। ফলে আগে চেয়ে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।’

  • বাংলাদেশের উদ্দেশ্য

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য কৌশলগত সম্পর্কের পরিধি বাড়াতে চাইছে বাংলাদেশ। বেইজিংয়ের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং দিল্লির সঙ্গে ‘কৌশলগত সম্পর্কের চেয়েও গভীর’ সম্পর্ক বজায় রাখে ঢাকা। এই সম্পর্কের গণ্ডি বাড়াতে জাপানের প্রতি আগ্রহী বাংলাদেশ।

কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে আপত্তি নেই টোকিও’র। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময়ে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে একটি ঘোষণা আসবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সফরে যে যৌথ বিবৃতি ঘোষণা করা হবে, সেখানে এ বিষয়ের উল্লেখ থাকবে।’

  • প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সবসময় সঙ্গে ছিল এবং এখনও আছে দেশটি। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। সামগ্রিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে পৃথক একটি সহযোগিতা স্মারক সই হতে পারে। মোটা দাগে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অধীনে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, যৌথ মহড়াসহ অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়গুলো থাকবে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বহুমুখীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক গভীর করা দরকার।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জাপান তাদের সামরিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় বাজার হতে পারে।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিরক্ষা খাতে জাপানের অবস্থান ভঙ্গুর ছিল, যা বর্তমানে আর নেই। ফলে তারা এখন বড় আকারে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করতে চাইছে বলে তিনি জানান।

  • ভূ-রাজনীতি

বর্তমান বিশ্বে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধুমাত্র দুটি দেশের জাতীয় স্বার্থের ওপর নির্ভর করে না। দেশ দুটির সঙ্গে অন্য দেশের কী সম্পর্ক এবং তারা কোন মতবাদে বিশ্বাস করে, সেটির ওপরও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ভর করে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘জাপান ওয়াশিংটন কনসেনসাসের অনুসারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র। সেই হিসেবে জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বৃদ্ধির ফলে পশ্চিমা দুনিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান আগের থেকে দৃঢ় হবে।’

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত অন্য দেশের ক্ষতির কারণ যেন না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

চীনের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক প্রতিযোগিতামূলক এবং বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় স্বার্থে বেইজিংয়ের পরিবর্তে টোকিও থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু জাপানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের নামে চীনবিরোধী কোনও জোটে যুক্ত হলে, বা সে ধরনের কোনও মনোভাব প্রদর্শন করলে, সেটি মনে হয় বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না।’

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com