শ্রমিক অধিকার হরণ হলে নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

শ্রমিক অধিকার হরণ হলে নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে, তাদের ওপর বাণিজ্য ও ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো এ সংক্রান্ত একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউজ।

এই মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পর সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের শ্রম মান উন্নয়নের জন্য কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির কেন্দ্রীয় অংশ এবং এটি পররাষ্ট্র দপ্তরেরও কার্যক্রমের মূল বিষয়। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের হুমকিধমকি দেবে, ভয় দেখাবে, শ্রম ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকার কর্মী এবং শ্রম সংগঠনের ওপর আক্রমণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এ সময় ব্লিনকেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের পাশে থাকতে চাই। এই কল্পনা আক্তার বলেছিলেন যে, তিনি এখনো জীবিত আছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে। ব্লিনকেন বলেন, শ্রম অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির চাবিকাঠি। এটি শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির বিষয়। আন্তর্জাতিক মানের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

ব্লিনকেন জানান, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকারকে সক্রিয়ভাবে একীভূত ও উন্নত করার জন্য পাঁচ ধরনের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রম সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীলসমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করবে, যাতে করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারকে সুরক্ষিত করা যায়। এর অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মীরা শ্রমিক ও শ্রম ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে, যাতে তাদের কথা যুক্তরাষ্ট্রের কাজের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।

দ্বিতীয়ত, যারা শ্রমিকদের হুমকিধমকি দেবে, ভয় দেখাবে, শ্রম ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি, শ্রম সংগঠনের ওপর আক্রমণ করবে তাদের নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

তৃতীয়ত, দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের জন্য চাকরির সুযোগ বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশে শ্রমিকদের অধিকার উন্নত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের সক্ষমতাকে বাড়ানো হবে। এজন্য শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তারা যাতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করতে পারে।

চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জাতিসংঘ, জি-২০-এর মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করবে, যাতে শ্রম অধিকার এবং শ্রমমান উন্নত করা যায় এবং পঞ্চমত, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বাণিজ্যচুক্তি এবং সাপ্লাই চেইন যাতে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা আরো বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করার মাধ্যমে উত্পাদিত পোশাক আমদানি বন্ধ করবে। ব্লিনকেন বলেন, বৈদেশিক নীতি চালুর বিষয়ে এটি একটি বাস্তবিক ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। এই বৈদেশিক নীতি সব আমেরিকানের পক্ষে কাজ করবে।

এদিকে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতিহাসের সবচেয়ে শ্রমবান্ধব প্রেসিডেন্ট এবং তিনি একটি টেকসই বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তোলার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন পদক্ষেপ শ্রমিকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো একটি জায়গা তৈরি করবে।

 

খবর: বিবিসির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *