সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা

সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক  ● চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরও সরকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রায় বড় ধরনের কাটছাঁট করতে যাচ্ছে সরকার। রাজস্ব আহরণে ধারাবাহিক ঘাটতিতে শেষ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো হচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। নির্ধারিত ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার বদলে এনবিআরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী রাজস্বের প্রধান তিন উৎস মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আয়কর ও শুল্ক খাতে পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এনবিআরও ওই সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে।

শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র মতে, এনবিআরকে অর্থবছরের শুরুতে বাজেটের আকার বিবেচনায় একটি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। লক্ষ্য অর্জনে এনবিআর যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা পালন করলেও এবারও পুরোপুরি সাফল্য আসেনি।  ফলে এবারো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে ওই বিষয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি সেলফোন অপারেটর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তামাক কোম্পানিসহ বড় করপোরেটদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় করা যায়নি।

পাশাপাশি পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বকেয়া প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্বও আদায় হয়নি। তাছাড়া বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অধীনে দেশের বড় কোম্পানিগুলোর ৩২ হাজার কোটি টাকার মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এনবিআর সন্দিহান। মূলত ওসব কারণেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধনী আনা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে মূসক খাতে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা কমিয়ে ৬৫ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর ওই খাত থেকে ৭৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কমানো হয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে ওই খাত থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয় ৭৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে ৬৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা নির্ধারণ হচ্ছে। অর্থাৎ আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কমছে ৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। তাছাড়া রাজস্ব আহরণের তৃতীয় খাত আমদানি-রফতানি পর্যায়ে শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কমছে ৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ৫৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার বদলে ওই খাত থেকে রাজস্ব আহরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরকে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন রাজস্ব আদায়ের ওই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত।

অর্থনৈতিক কর্মকা- স্বাভাবিক থাকলে ও রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিলে ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে অর্থনীতিবিদরা ওই লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক অন্যান্য সূচক বিবেচনায় নিলে কোনোভাবেই রাজস্ব আহরণে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। যদিও রাজস্ব আহরণে উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণসহ এনবিআর যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধিও অতীতের চেয়ে ভালো। ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেই তা বাস্তবায়নযোগ্য হতো। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান জানান, রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা এখনো এনবিআরের হাতে আসেনি। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া আদায়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের মাধ্যমে পেট্রোবাংলা ও বিপিসির বকেয়া আদায়েও। পাশাপাশি মামলাজনিত কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে থাকা রাজস্ব আহরণেও জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *